পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VG O রবীন্দ্র-রচনাবলী যে-সকল জোড়াশব্দের দুই অংশের এক অর্থ নহে। কিন্তু অর্থটা কাছাকাছি, তাহাদের দৃষ্টান্ত : মাল-মসলা দোকান-হাট হাঁকডাক ধীরেসুস্থে ভাব-গতিক ভাবভঙ্গি লম্ফঝফ চাল-চলন পাল-পার্বণ উকিঝুকি পাজিপুঁথি লম্বা-চওড়া দলামালা বাছ-বিছার জ্বালা-যন্ত্রণা সাতপাচ নয়ছয় ছকড়া-নকড়া উনিশ-বিশ সাত-সতেরো আলাপ-পরিচয় কথাবার্তা বন-বাদাড় ঝোপঝাড় হাসিখুশি আমােদ-আহলাদ লোহা-লক্কড় শাক-সবজি বৃষ্টি-বাদল ঝড়তুফান লাথিবীটা সেঁকতাপ আদর-অভ্যর্থনা চালচুলো । চাষবাস মুটে-মজুর ছলবল । ছাইভষ্ম প্রভৃতি দুই সমানার্থক জোড়াশব্দ জোর দিবার জন্য প্রয়োগ করা হয়— মালমসলা দোকানহাট প্রভৃতি সমশ্রেণীর ভিন্নার্থক জোড়াশব্দে একটা ইত্যাদিসূচক অনির্দিষ্টতা প্রকাশ করে । কাণ্ড-কারখানা চুরি-চামারি হাসিখুশি প্রভৃতি কথাগুলির মধ্যে ভাষাও আছে৷ আভাসও আছে। যে-সকল পদার্থ আমরা সচরাচর একসঙ্গে দেখি তাহাদের মধ্যে বাছিয়া দুটি পদার্থের নাম একত্রে জুড়িয়া বাকিগুলাকে ইত্যাদিভাবে বুঝাইয়া দিবার প্রথাও বাংলায় প্রচলিত আছে ; যেমন, ঘটিবাটি । যদি বলা যায় ঘটিবাটি সামলাইয়ো, তাহার অর্থ এমন নহে যে, কেবল ঘটি ও বাটিই সামলাইতে হইবে, এইসঙ্গে থালা ঘড়া প্রভৃতি অনেক অস্থাবর জিনিস আসিয়া পড়ে। কাহারও সহিত মাঠে-ঘাটে দেখা হইয়া থাকে, বলিলে কেবল যে ঐ দুটি মাত্র স্থানেই সাক্ষাৎ ঘটে তাহা বুঝায় না, উক্ত লোকটির সঙ্গে যেখানে-সেখানেই দেখা হয় এইরূপ বুঝিতে হয়। এইরূপ জোড়া-কথার দৃষ্টান্ত ; পথঘাট ঘর-দুয়োর ঘটিবাটি কাছা-কেঁচা হাতিঘোড়া বাঘ-ভাল্পক খেলাধুলা (খেলা-দেয়ালা) পড়াশুনা খালবিল লোক-লশকর গাড়-গামছা লেপকাথা গান-বাজনা খেতখোলা কানাখোড়া কালিয়া-পোলাও শাকভাত সেপাই-সাস্ত্রী নাড়ি-নক্ষত্র কোলেপিঠে কাঠখড় দত্যিদানো ভূতপ্ৰেত । বিপরীতাৰ্থক শব্দ জুড়িয়া সমগ্রতা ও বৈপরীত্য বুঝাইবার দৃষ্টান্ত : আগাগোড়া ল্যাজামুড়ো আকাশ-পাতাল দেওয়া-থোওয়া নরম-গরম আনাগোনা উলটোপালটা তোলপাড় আগা-পাস্তাড়া । এই যতপ্রকার জোড়াশব্দের তালিকা দেওয়া গেছে সংস্কৃত সমাসের সঙ্গে তাহাদের বিশেষত্ব এই যে, শব্দগুলির যে অর্থ তাহাদের ভাবটা তাহার চেয়ে বেশি এবং এই কথার জুড়িগুলি যেন একেবারে চিরদাম্পত্যে বাধা । বাঘভালুক না বলিয়া বাঘসিংহ বলিতে গেলে একটা অত্যাচার হইবে ; বনজঙ্গল এবং ঝোপঝাড় শব্দকে বনঝাড় এবং ঝোপজঙ্গল বলিলে ভাষা নারাজ হয়, অথচ অর্থের অসংগতি হয় कीं । এইখানে ইংরেজিতে যে-সকল ইঙ্গিতবাক্য প্রচলিত আছে তাহার যে-কয়েকটি দৃষ্টান্ত মনে পড়িতেছে। উল্লেখ করিতে ইচ্ছা করি ; বাংলার সহিত তুলনা করিলে পাঠকেরা সাদৃশ্য দেখিতে °iÈ(<r : nick-nack riff-raff wishy-washy dilly-dally shilly-shally pit-a-pat bric-a-brac এই উদাহরণগুলিতে জোড়াশব্দের দ্বিতীয়ার্ধে আকারের প্রাদুর্ভাব দেখা যাইতেছে। আমরা পূর্বেই দেখিয়াছি, বাংলাতেও এইরূপ স্থলে শেষার্ধে আকারটাই আসিয়া পড়ে ; যেমন, হাে-হা জো-জা জোর-জার। কিন্তু যেখানে প্রথমার্ধে আকার থাকে, দ্বিতীয়ার্ধে সেখানে ওকারের প্রচলনই বেশি ; যেমন, ঘা-ঘো টান-টোন টায়-টোয় ঠারে-ঠোরে । সবশেষে যদি ইকার থাকে। তবে মাঝের ওকার উ হইয়া যায়, যেমন জারি-জুরি । fRISTICKÍ KJEngsrikĪGS NO : Hotchpotch higgledy-piggledy harum-scarum helter-skelter hoity-toity hurly-burly roly-poly hugger-mugger namby-pamby wishy-washy আমাদের যেমন টুংটাং ইংরেজি তেমনই ding-dong, আমাদের যেমন ঠঙাঠিঙ ইংরেজিতে CONRR ding-a-dong | প্রথমার্ধের সহিত দ্বিতীয়ার্ধের মিল নাই এমন দৃষ্টান্ত- topsyturvy |