পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । সমাজ · \ტ\ე\9 দেওয়া হয় নাই। যদি জানা যাইত অন্যদেশের তুলনায় আমাদের দেশে বিবাহিত পুরুষের অধিকাংশই বারস্ত্ৰীসক্ত নহে। তবে হিন্দুবিবাহের পবিত্র প্রভাব সম্বন্ধে সন্দেহমোচন হইত। কিন্তু যখন পুরুষ যথেচ্ছ বিবাহ ও ব্যভিচার করিতে পারে এবং স্ত্রীলোকের স্বামীত্যাগের পথ কঠিন নিয়মের দ্বারা রুদ্ধ তখন এ প্রসঙ্গে কোনো তুলনাই উঠিতে পারে না । - আমাদের দেশে বিবাহিত পুরুষদের মধ্যে দাম্পত্যনীতি সম্বন্ধে যথেচ্ছাচার যে যথেষ্ট প্রচলিত আছে তাহা বোধ করি কাহাকেও বলিতে হইবে না। বৃদ্ধ লোকেরা অবগত আছেন, কিছুকাল পূর্বে অন্যান্য নানা আয়োজনের মধ্যে বেশ্যা রাখাও বড়োমানুষির এক অঙ্গ ছিল । এখনো দেখা যায় দেশের অনেক খ্যাতনামা লোক প্রকাশ্যে রাজপথে গাড়ি করিয়া বেশ্য লইয়া যাইতে এবং ধুমধাম করিয়া বেশ্যা প্রতিপালন করিতে কিছুমাত্র সংকোচ বোধ করেন না এবং সমাজও সে বিষয়ে তাহাদিগকে লাঞ্ছনা করে না । সমাজের অনেক তুচ্ছ নিয়মটুকু লঙঘন করিলে যে দায়ে পড়িতে হয় ইহাতে ততটুকু দায়ও নাই। অতএব ডিভোর্স প্রথা আমাদের মধ্যে প্রচলিত নাই বলিয়াই ইহা বলা যায় না যে, আমাদের দেশে বিবাহের পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিক একীকরণত রক্ষার প্রতি সমাজের বিশেষ মনোযোগ अioछ । যাহা হউক আমার বক্তব্য এই যে, হিন্দুবিবাহের যথার্থ যাহা মর্ম ইতিহাস হইতে তাহা প্ৰমাণ না করিয়া যদি ইংরেজি শিক্ষার প্রভাবে আপন মনের মতো এক নূতন আদর্শ গড়িয়া তাহাকে পুরাতন বলিয়া প্রচার করিতে চেষ্টা করি, তবে সত্যপথ হইতে ভ্ৰষ্ট হইতে হয় । আমরা ইংরেজি শিক্ষা হইতে অনেক sentiment প্রাপ্ত হইয়াছি।(sentiment শব্দের বাংলা আমার মনে আসিতেছে না), অনেক দেশানুরাগী ব্যক্তি সেইগুলিকে দেশীয় ও প্রাচীন বলিয়া প্রমাণ করিবার জন্য বিশেষ উৎসুক হইয়াছেন, এবং তঁাহারা বিরোধী পক্ষকে বিজাতীয় শিক্ষায় বিকৃতমস্তিষ্ক বলিয়া উপহাস করেন। কেবল sentiment INGR, ONGAKS Evolution, Natural Selection, Magnetism SelfS KIJ বিজ্ঞানতন্ত্ৰসকলও প্রাচীন ঋষিদের জটাজালের মধ্য হইতে সূক্ষ্মদৃষ্টিতে বাছিয়া বাহির করিতেছেন। কিন্তু সাপুড়ে অনেক সময়ে নিরীহ দর্শকের ক্ষুদ্র নাসাবিবর হইতে একটা বৃহৎ সাপ বাহির করে বলিয়াই যে উক্ত নাসাবিবর যথার্থ সেই সাপের আশ্রয়স্থল বলিয়া বিশ্বাস করিতে হইবে এমন নহে। সাপ তাহার বৃহৎ বুলিটার মধ্যেই ছিল। sentiment সকলও আমাদের বুলিটার মধ্যেই আছে, আমরা নানা কৌশলে ও অনেক বাঁশি বাজাইয়া সেগুলি পুঁথির মধ্য হইতেই যেন বাহির করিলাম। এইরূপ অন্যকে এবং আপনাকে বুঝাইতেছি। হিন্দুবিবাহের মধ্যে আমরা যতটা sentiment পুরিয়াছি তাহার কতটা Comte-র, কতটা ইংরেজি কাব্যসাহিত্যের, কতটা খৃস্টধর্মের “স্বগীয় পবিত্রতা’ নামক শব্দ ও ভাব বিশেষের এবং কতটা প্রাচীন হিন্দুর এবং কতটা আধুনিক আচারের, তাহা বলা দুঃসাধ্য। সাংসারিকতাকে প্রাচীন হিন্দুরা হেয়জজ্ঞান করিতেন না, কিন্তু খৃস্টানেরা করেন।ণ অতএব, পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভাৰ্যা- এ কথা স্বীকার করা হিন্দুর পক্ষে লজ্জার কারণ নহে, খৃস্টানের পক্ষে বটে। হিন্দু স্ত্রীকে যে পতিপ্ৰাণা হইতে হইবে সেও সাংসারিক সুবিধার জন্য । পুত্রার্থেই বিবাহ কর বা যে কারণেই কর-না কেন, স্ত্রী যদি পতিপ্ৰাণা না হয় তবে অশেষ সাংসারিক অসুখের কারণ হয়, এবং অনেক সময়ে বিবাহের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হইয়া যায়, অতএব সাংসারিক শৃঙ্খলার জন্যই স্ত্রীর পতিপ্ৰাণা হওয়া আবশ্যক। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে স্বামীর পত্নীগতপ্ৰাণ হইবার এত আবশ্যক নাই যে তাহার জন্য ধরাবাধা করিতে হয়। এইজন্যই শাস্ত্ৰে বলে, সা ভাৰ্য যা প্রতিপ্ৰাণা, সা ভাৰ্য যা প্ৰজাবতী— সেই ভাৰ্য যে পতিপ্ৰাণী । কিন্তু ইহা বলিয়াই শেষ হয় নাই- তাহার উপরে বলা হইয়াছে, সেই ভাৰ্য যে সন্তানবতী । আধ্যাত্মিক পবিত্রতা যতই থাক, সন্তান না হইলেই হিন্দুবিবাহ ব্যৰ্থ। । এইখানে আমার মনে একটি আশঙ্কা জন্মিতেছে। যে-শব্দের পরিষ্কার অর্থ নাই অথবা নির্দিষ্ট হয়। নাই তাহা ইচ্ছামত নানা স্থানে নানা অর্থে প্রয়োগ করা যাইতে পারে। ইহাতে সে-শব্দের উপযোগিতা বাড়ে কি কমে তাহা বিচারের যোগ্য। সকলেই জানেন আমাদের বাংলাভাষায় ‘ইয়ে নামক সর্বভুক । সর্বনাম শব্দ আছে ; শব্দ বা ভাবের অভাব হইলেই তৎক্ষণাৎ "ইয়ে আসিয়া ভাষার শূন্যতা পূৰ্ণ করিয়া