পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ιον রবীন্দ্র-রচনাবলী মোগলরাজত্বের সময়েও কি মুসলমানের অনুকরণ আমাদের দেশে ব্যাপ্ত হয় নাই। নিশ্চয়ই তাহাতে ভালোমন্দ দুইই ঘটিয়াছিল। কিন্তু ইংরেজিয়ানার নকলের সহিত তাহার একটি গুরুতর প্ৰভেদ ছিল, তাহার আলোচনা আবশ্যক । মুসলমানরাজত্ব ভারতবর্ষেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। বাহিরে তাহার মূল ছিল না। এইজন্য মুসলমান ও হিন্দু সভ্যতা পরস্পর জড়িত হইয়াছিল। পরস্পরের মধ্যে স্বাভাবিক আদানপ্রদানের সহস্ৰ পথ ছিল। এইজন্য মুসলমানের সংস্রবে। আমাদের সংগীত সাহিত্য শিল্পকলা বেশভূষা আচারব্যবহার, দুই পক্ষের যোগে নির্মিত হইয়া উঠিতেছিল। উর্দুভাষার ব্যাকরণগত ভিত্তি ভারতবষীয়, তাহার অভিধান বহুলপরিমাণে পারসিক ও আরবি । আধুনিক হিন্দুসংগীতও এইরূপ। অন্য সমস্ত শিল্পকলা হিন্দু ও মুসলমান কারিকরের রুচি ও নৈপুণ্যে রচিত । চাপিকান-জাতীয় সাজ যে মুসলমানের অনুকরণ তাহা নহে, তাহা উর্দুভাষার ন্যায় হিন্দুমুসলমানের মিশ্ৰিত সাজ- ; তাহা ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন আকারে १ॉठिंऊ शेंगाझा ऐळेिशांछिल । লেখক লিখিয়াছেন, বিলাতিয়ানার মূল আদর্শ বিলাতে, ভারতবর্ষ হইতে বহুদূরে । সুতরাং এই আদর্শ আমরা অবলম্বন করিলে বরাবর তাহাকে জীবিত রাখিতে পারিব না, মূলের সহিত প্ৰত্যক্ষ যোগ না থাকাতে, আজ না হউক। কাল তাহা বিকৃত হইয়া যাইবে । বিলাতের যাহা-কিছু সম্পূর্ণ আমাদের করিয়া লইতে পারি, অর্থাৎ যাহাতে করিয়া আমাদের মধ্যে অন্যায় আত্মবিরোধ না ঘটে, চারি দিকের সহিত সামঞ্জস্য নষ্ট না হয়, যাহা আমাদের সহিত মিশ্রিত হইয়া আমাদিগকে পোষণ করিতে পারে, ভারাক্রান্ত বা ব্যাধিগ্রস্ত না করে, তাহাতেই আমাদের বলবৃদ্ধি এবং তাহার বিপরীতে আমাদের আয়ুক্ষয়মাত্র । সাহেবিয়ানা আমাদের পক্ষে বোঝা । তাহার কাঠখড় অধিকাংশ বিলাত হইতে আনাইতে হয়, তাহার খরচ অতিরিক্ত। তাহা আমাদের সর্বসাধারণের পক্ষে নিতান্ত দুঃসাধ্য। তাহাতে আমাদের নিজের আদর্শ নিজের আশ্রয় নষ্ট করে, অথচ তৎপরিবর্তে যে-আদর্শ যে-আশ্রয় দেয়, তাহা আমরা সম্পূর্ণভাবে বিশুদ্ধভাবে রক্ষা করিতে পারি না। তীর ছাড়িয়া যে-নীেকায় পা দিই, সে-নৌকার হাল অন্যত্র । মাঝে হইতে স্বেচ্ছাচার-অনাচার প্রবল হইয়া উঠে । সেইজন্য প্রতিদিন দেখিতেছি, আমাদের দেশী সাহেবিয়ানার মধ্যে কোনো ধুব আদর্শ নাই ; ভালোমন্দ শিষ্ট-অশিষ্ট্রর স্থলে সুবিধা-অসুবিধা ইচ্ছা-অনিচ্ছা দখল করিয়া বসিয়াছে। কেহ-বা নিজের সুবিধামতে একরূপ আচরণ করে, কেহ বা অন্যরূপ ; কেহ বা যেটাকে বিলাতি হিসাবে কর্তব্য বলিয়া জানে, দেশী সমাজের উত্তেজনার অভাবে আলস্যবশত তাহা পালন করে না ; কেহ বা যেটা সকল সমাজের মতেই গৰ্হিত বলিয়া জানে, স্বাধীন আচারের দোহাই দিয়া স্পর্ধার সহিত তাহা চালাইয়া দেয়। এক দিকে অবিকল অনুকরণ, এক দিকে উদ্ধৃঙ্খল স্বাধীনতা। এক দিকে মানসিক দাসত্ব, অন্য দিকে স্পর্ধিত ঔদ্ধত্য। সর্বপ্রকার আদর্শচ্যুতিই ইহার কারণ। এই আদর্শচ্যুতি এখনো যদি তেমন কুদৃশ্য হইয়া না উঠে, কালক্রমে তাহা উত্তরোত্তর কদৰ্য হইতে থাকিবে, সন্দেহ নাই । যাহারা ইংরেজের টাটকা সংস্রব হইতে নকল করিতেছেন তাহদের মধ্যেও যদি ইংরেজি সামাজিক শিষ্টতার বিশুদ্ধ আদর্শ রক্ষিত না হয়, তবে তাহদের উত্তরবংশীয়দের মধ্যে বিকার কিরাপ বিষম হইয়া উঠিবে, তাহা কল্পনা করিতেও লজাবোধ হয়। ব্যাজটু বলেন, অনুকরণের প্রভাবে জাতি গঠিত হইতে থাকে, কিন্তু তাহা সংগত অনুকরণেজাতীয় প্রকৃতির অনুকুল অনুকরণে। I ধুবানি তস্য নশ্যক্তি ধ্রুব নষ্টমেব চ। . SVOor