পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । শিক্ষা ৭১৯ : পূর্বপ্রশ্নের অনুবৃত্তি বৈশাখের ভাণ্ডারে যে-প্রশ্ন’ তোলা হইয়াছিল অর্থাৎ আমাদের দেশের পরিক উদযোগগুলির সঙ্গে দেশের প্রাকৃতসাধারণের যোগ রক্ষার উপায় কী— দেশের নানা বিশিষ্ট লোকের কােছ হইতে তাহার উত্তর পাওয়া গেছে । 弹 আশ্চর্যের বিষয় এই যে, র্যাহারা লিখিয়াছেন, তাহারা আমাদের দেশের আধুনিক উদযোগগুলির উপকারিতা সম্বন্ধে একমত নহেন, তবু মোটের উপর তঁহাদের উত্তরগুলির মধ্যে কোনো অনৈক্য নাই । র্তাহারা সকলেই এই কথা বলেন যে, প্রাকৃতসাধারণকে আমাদের পরিক উদযোগে আহবান করা এখন চলে না । আগে তাহদের শিক্ষার ভালো বন্দোবস্ত করা চাই । তাহার কারণ ইহারা বলিতেছেন, দেশ বলিতে কী বুঝায় তাহা দেশের সাধারণ লোকে বুঝে না, এবং দেশের হিত যে কেমন করিয়া করিতে হইবে তাহাও ইহাদের বুদ্ধিতে আসিবে না। অতএব, ইস্কুল করিয়া এবং অন্য পাচরকম উপায়ে ইহাদের শিক্ষার গোড়াপত্তন করিয়া দেওয়া চাই । কথাটা একটা বড়ো কথা, প্ৰথমে এ বিষয়ে সমাজে একটা মতের স্থিরতা হওয়া চাই, তার পরে কাজে লাগিতে হইবে । o ভাণ্ডারের পরীক্ষায় এটা দাড়াইতেছে যে, মতের মিল হইয়াছে। কিন্তু কর্তব্যসম্বন্ধে মতের মিল হওয়া সহজ, উপায় সম্বন্ধে মিল হওয়াই কঠিন । তবু কাজ আরম্ভ করিতে হইলে কাজের কথা পাড়িতেই হইবে, কোথায় কী বিঘ্ন আছে তাহা স্পষ্ট করিয়া ভাবিয়া না দেখিলে চলিবে না । আমরা দেখিতেছি, গবমেন্ট আমাদের দেশের প্রাকৃতসাধারণের শিক্ষার একটা বিশেষ বন্দোবস্ত করিতে উদযোগী হইয়াছেন । ইহাও দেখিতেছি, সেইসঙ্গে তাহারা ভারি একটা দ্বিধার মধ্যে পড়িয়া গেছেন । তাহারা দেখিয়াছেন, দেশের লোক রোগে এবং দুর্ভিক্ষে একেবারে অবাধে মারা পড়িতেছে। ইহাতে র্তাহাদের শাসনকার্যের একটা ভারি কঠিন সমস্যা উপস্থিত হইয়াছে। প্ৰজার অন্নবস্ত্র এবং প্ৰাণটা বঁাচানো কেবল যে প্ৰজার হিত তাহা নহে, তাহা রাজারও স্বাৰ্থ । কর্তারা মনে করিতেছেন, চাষীরা যদি আর-একটু ভালো করিয়া চাষ করিতে শেখে এবং স্বাস্থ্য । বঁাচাইয়া চলিবার উপদেশ পায়, যদি সাধারণ হিসাবপত্রটা লিখিয়া জমিদার ও মহাজনের অন্যায় প্ৰবঞ্চনার হাত এড়াইতে পারে, তবে তাহাতে দেশের যতটুকু শ্ৰীরিক্ষা হইবে, তাহাতে প্ৰজার লাভ এবং রাজারও লাভ । অতএব গোড়ায় তাহদের শিক্ষার ব্যবস্থা চাই । ] কিন্তু শিক্ষা-জিনিসটাকে একদিকে একবার শুরু করিয়া দিলে তার পরে তাহাকে গণ্ডি টানিয়া কমানো শক্ত । বিদেশী রাজার পক্ষে সেটা একটা বিষম ভাবনা । প্ৰজা বাচিয়া-বর্তিয়া থাকে, এটা তাহার একান্ত প্রয়োজন, কিন্তু বঁাচার চেয়েও যদি বেশি অগ্রসর হইয়া পড়ে, তবে সেটা তাহার প্রয়োজনের সঙ্গে ঠিক খাপ খায় না। এইজন্য প্রাইমারি শিক্ষার প্রস্তাবে কর্তৃপক্ষের নানারকম দুশ্চিন্তার লক্ষণ দেখা যাইতেছে। র্তাহারা ভাবিতেছেন খাল কাটিয়া বেনো জল ঢোকানো কাজটা ভালো নয়- শিক্ষার সুযোগে আমাদের বুলি ভদ্রলােকের চেষ্টা যদি চাষার মধ্যে প্রবেশ করে, তবে সে একটা বিষন্ন অঞ্চলে সৃষ্ট করা इति । ১ প্রশ্নকর্তা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । ২ নগেন্দ্রনাথ ঘোষ, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, আশুতোষ চৌধুরী, যোগেশচন্দ্ৰ চৌধুরী, রামেন্দ্রসুন্দর ত্ৰিবেদী, পৃথীশচন্দ্র রায়, বিপিনচন্দ্ৰ পাল- ভাণ্ডার, বৈশাখ ১৩১২