পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । শিক্ষা r ৭২১ স্বৰ্গগত মহাত্মা মহেন্দ্রলাল সরকার মহাশয় গবর্মেন্টের উৎসাহে ও দেশের লোকের আনুকূল্যে একটি বিজ্ঞানসভা স্থাপন করিয়া গেছেন । । দেশে বিজ্ঞানপ্রচারই এই সভার উদ্দেশ্য । আমাদের দেশের লোকহিত্যকরী সভাগুলির মতো এ সভাটি নিঃস্ব নয়। ইহার নিজের চালচুলা VIC3 | এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই যে, দেশে বিজ্ঞানচর্চার তেমন ভালোরকম সুযোগ জুটিতেছে না। প্রেসিডেন্সি কলেজে সম্প্রতি কিছু বন্দোবস্ত হইয়াছে, কিন্তু সেখানে আমরা পরাধীন, তাহার পরে আমরা অধিক ভরসা রাখি না। আমাদের ছেলেদের যে বুদ্ধিাশুদ্ধি কিছুই নাই, সেখান হইতে এমন খোটা খাইবার সম্ভাবনা আমাদের আছে । বিজ্ঞানচর্চাসম্বন্ধে দেশের এমন দুরবস্থা অথচ এই বিদ্যাদুর্ভিক্ষের মাঝখানে বিজ্ঞানসভা তাহার পরিপুষ্ট ভাণ্ডারটি লইয়া দিব্য সুস্থভাবে বসিয়া আছেন। সেখানকার হলে মাঝে মাঝে লেকচার হইয়া থাকে জানি- সেটা কলেজের লেকচারের মতোতেমন লেকচারের জন্য কোনো বিশেষ বন্দোবস্তের বিশেষ প্রয়োজন নাই। যাহা হউক, এটুকু নিঃসন্দেহ যে, বিজ্ঞানসভা নাম ধরিয়া একটা ব্যাপার এ দেশে বর্তমান এবং তাহার যন্ত্রতন্ত্ৰ-অৰ্থসামর্থ্য কিঞ্চিৎ পরিমাণে আছে । আমাদের যাহা নাই, তাহার জন্য আমরা রাজদ্বারে ধন্না দিয়া পড়ি এবং চাদার খাতা লইয়া গলদঘর্ম হইয়া বেড়াই- কিন্তু যাহা আছে, তাহাকে কেমন করিয়া কাজে লাগাইতে হইবে, সে দিকে কি আমরা দৃষ্টিপাত করিব না। আমাদের অভাবের মাঝখানে এই যে বিজ্ঞানসভা ঘুমাইয়া পড়িয়ছে, ইহার কি ঘুম ভাঙাইবার সময় হয় নাই । আমাদের দেশে অধ্যাপক জগদীশ, অধ্যাপক প্ৰফুল্লচন্দ্ৰ দেশবিদেশে যশোলাভ করিয়াছেন, বিজ্ঞানসভা কি তাহাদিগকে কাজে লাগাইবার জন্য কিছুমাত্র চেষ্টা করিতেছেন । দেশের বিজ্ঞানসভা দেশের বিজ্ঞানবীরদের মুখের দিকে তাকাইবেন না ? ইহাতে কি তাহার লেশমাত্র গৌরব বা সার্থকতা जाgछ । যদি জগদীশ ও প্রফুল্লচন্দ্রের শিক্ষাধীনে দেশের কয়েকটি অধ্যবসায়ী ছাত্রকে মানুষ করিয়া তুলিবার ভার বিজ্ঞানসভা গ্রহণ করেন, তবে সভা এবং দেশ উভয়েই ধন্য হইবেন । স্বদেশে বিজ্ঞান প্রচার করিবার দ্বিতীয় সদুপায়, স্বদেশের ভাষায় বিজ্ঞান প্রচার করা । যতদিন পর্যন্ত । না বাংলাভাষায় বিজ্ঞানের বই বাহির হইতে থাকিবে, ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটির মধ্যে বিজ্ঞানের শিকড় প্রবেশ করিতে পরিবে না । অধ্যাপক শ্ৰীযুক্ত যোগেশচন্দ্র রায় প্রভৃতি কয়েকজন বিজ্ঞানপণ্ডিত, দেশের ভাষায় দেশের লোকের কাছে বিজ্ঞানের পরিচয় দিতে উদ্যত হইয়াছেন। বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে সেজন্য র্তাহাদের নাম থাকিয়া যাইবে । কিন্তু বিজ্ঞানসভা কী করিলেন । দেশের প্রতিভাবান ব্যক্তিদিগকে ও সুযোগ্য অনুসন্ধিৎসুদিগকে বিজ্ঞানচর্চার সুযোগ দান করা, ও দেশের ভাষায় সর্বসাধারণের পক্ষে বিজ্ঞানশিক্ষাকে সুগম করিয়া দেওয়া, বিজ্ঞান প্রচারের উদ্দেশে বিজ্ঞানসভার এই দুটি মস্ত কাজ আছে ; ইহার মধ্যে কোনোটাই তিনি করিতেছেন না । কেহ যেন না মনে করেন যে, আমি বিজ্ঞানসভার সম্পাদক প্রভৃতিকে এজন্য দায়ী করিতেছি। মন্দিরে প্রদীপ জ্বালাইয়া রাখিবার ভার তাহদের উপরে আছে মাত্র । কিন্তু সভা যে আমাদের সকলের। ইহা যদি সমস্ত আয়োজন উপকরণ লইয়া নিস্ফল হইয়া পড়িয়া থাকে, তবে সেজন্য আমরা । প্রত্যেকেই দায়ী । ইহাকে কাজে লাগাইবার কর্তা আমরা সকলেই, কোনাে ব্যক্তিবিশেষ নহে। আমরা স্বকীয় শাসনের অধিকার লইবার জন্য রাজদ্বরে প্রার্থনা করিতেছি। কিন্তু বিজ্ঞানসভার ৈ V8V