পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१७8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সবার অগ্রজ তুমি, তোরে কি শিখাব আমি 略 বাপ মোর যাইরে নিছনি । এখানেও তাহাঁই । নিছনি যাইয়ে পুত্ৰ উঠহ এখন কহয়ে মাধব উঠি বসিল তখন । নিছনি যাইয়ে- অর্থাৎ সমস্ত অমঙ্গল দূর হইয়া । ১। অমিয়া নিছনি বাজিছে সঘনে মধুর মুরলীগীত অবিচল কুল রমণী সকল শুনিয়া হরল চিত । অমিয়া নিছনি- অর্থাৎ অমৃত মুছিয়া লইয়া । ২। নন্দের নন্দন গোকুল কানাই সবাই আপনা বোলে মোপুনি ইছিয়া নিছিয়া লইনু অনাদি জনম ফলে । নিছিয়া লইনু- আরাধনা করিয়া লইনু, অর্থাৎ বরণ করিয়া লইনু অর্থ হইতে পারে। ৩ । তথা কনক বরণ কিরে দরপণ নিছনি দিয়ে যে তার কপালে ললিত চান্দ যে শোভিত সিন্দুর অরুণ আর । ৪ । তনু ধন জন যৌবন নিছিনু কালার পিরিতে । উদধূত। [১, ২, ৩, ৪] অংশগুলি চণ্ডীদাসের পদের অন্তর্গত সন্দেহ নাই। নিছনি শব্দ যদি নির্মািঞ্ছন শব্দেরই অপভাষা হয় তবে নির্মািঞ্ছন শব্দের যতগুলি অর্থ আছে নিছনি শব্দের তদাতিরিক্ত অর্থ হওয়ার সম্ভাবনা বিরল । দীনেন্দ্ৰকুমার বাবু নিছনি শব্দের যতগুলি প্রয়োগ উদ্ধৃত করিয়াছেন।” তাহার সকলগুলিতেই কোনো-না-কোনো অর্থে নির্মািঞ্ছন শব্দ খাটে । দীনেন্দ্রবাবু শ্রম স্বীকার করিয়া এই আলোচনায় যোগ দিয়াছেন সেজন্য আমি বিশেষ আনন্দ লাভ করিয়াছি। আমাদের প্রাচীন কাব্যে যে-সকল দুর্বোধি শব্দপ্রয়োগ আছে সাধারণের মধ্যে আলোচিত হইয়া এইরূপে তাহার মীমাংসা হইতে পারিলে বড়োই সুখের বিষয় হইবে । S ૨છે છે ' বৈষ্ণব কবিদের গ্রন্থে সচরাচর পাই শব্দের দুই অর্থ দেখা যায়, প্ৰভু এবং পুনঃ । শ্রদ্ধাস্পদ অক্ষয়চন্দ্র সরকার মহাশয় তাহার প্রকাশিত প্ৰাচীন কাব্যসংগ্রহের টীকায় লিখিয়াছেন পহু অর্থে প্ৰভু এবং পহু অর্থে পুনঃ । কিন্তু উভয় অর্থেই পৰ্ছ শব্দের ব্যবহার এত দেখা গিয়াছে যে, নিশ্চয় বলা যায় এ নিয়ম এক্ষণে আর খাটে না । দীনেন্দ্রবাবু যতগুলি ভণিতা উদধূত করিয়াছেন প্রায় তাহার সকলগুলিতেই পহু এবং পাই শব্দের অর্থ প্ৰভু । * গোবিন্দদাস পহু নটাবর শেখর অর্থাৎ গোবিন্দদাসের প্রভু নটাবর শেখর । রাধামোহন পৰ্ছ রসিক সুনাহ অর্থাৎ রাধামোহনের প্রভু রসিক সু-নাথ । নরোত্তমদাস পাই নাগার কান, রসিক কলাগুরু তুহু সব জান । r ইহার অর্থ এই, তুমি নরোত্তমদাসের প্রভু নাগর কান, তুমি রসিক কলাগুরু, তুমি সকলই জান। এরূপ ১ “নিছনি, দীনেন্দ্ৰকুমার রায় । সাধনা, বৈশাখ ১২৯৯ ২ ‘পাই’ (১), দীনেন্দ্ৰকুমার রায় । সাধনা, জ্যৈষ্ঠ ১২৯৯