পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । শব্দতত্ত্ব ԳՎ)S শিরীষ কুসুম জিনি তনু অতি সুকোমল ঢর ঢের ও মুখচন্দ - , গৃহ নিজ কাজ সমাপল সখীজন গুরুজন সেবন ফেলি । গোবিন্দদাস পহু দীপ সায়াহ্ন বেলি অবসান ভৈ গেলি । এই পদে কেবল রাধিকার গৃহের কথা হইতেছে ; তিনি ক্ৰমে ক্ৰমে গৃহকাৰ্য এবং ভোজনাদি সমাধা করিলেন এবং সন্ধ্যা হইল- কবি ইহাই দর্শন এবং বর্ণনা করিতেছেন । এখানে শ্যাম কোথায় যে র্তাহাকে সম্বোধন করিয়া বলিবেন যে, “হে গোবিন্দদাসের বঁধু, বেলা গেল সন্ধ্যা হল ।” আমি কেবল নির্দেশ করিতে চাহি যে, গোবিন্দদাসের এবং দুই-এক স্থলে রাধামোহন দাসের পুরীতে পহু পদ্ধ বা পহু-প্রত্ন ও ২ অর্থে ব্যবহৃত হয় না। কী অর্থে হয় তাহ নিসংশয়ে বলা কিন্তু প্ৰাচীন কাব্যসংগ্রহে বিদ্যাপতির নোটে অক্ষয়বাবু এক স্থলে পহু অর্থে পুনঃ লিখিয়াছেন। র্তাহার সেই অর্থ নিতান্ত অনুমানমূলক না মনে করিয়া আমরা তাঁহাই গ্রহণ করিয়াছি এবং দেখিয়াছি স্থানে স্থানে পৰ্ছ শব্দের পুনঃ অর্থ সংগত হয়। কিন্তু তথাপি স্থানে স্থানে ভণে অর্থনা করিয়া পুনঃ অর্থ করিলে ভােব অসম্পূর্ণ থাকে ; যেমন, গোবিন্দদাস পহু দীপ সায়াহ্ন ইত্যাদি। এই কারণে আমরা কিঞ্চিৎ দ্বিধায় পড়িয়া আছি। ভণই এবং পুনৰ্ছ এই দুই শব্দ হইতেই যদি পৰ্ছ-র বা উৎপত্তি হইয়া থাকে। তবে স্থানভেদে এই দুই অর্থই স্বীকার করিয়া লওয়া যায়। কিন্তু স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, গোবিন্দদাস (এবং কদাচিৎ রাধামোহন) ছাড়া আর-কোনো বৈষ্ণব কবির পদাবলীতে পাৰ্ছ শব্দ প্রয়োগের এরূপ গোলযোগ নাই। অতএব ইহার বিরুদ্ধে যদি অন্য কোনো দৃষ্টান্ত ও প্রমাণ না থাকে। তবে অনুমান করা যাইতে পারে যে, এই শব্দ ব্যবহারে গােবিলদাসের বিশেষ এক শৈথিল প্রসঙ্গক্রমে জিজ্ঞাসা করি ; আপনি মিথিলা প্রচলিত বিদ্যাপতির পদ হইতে যে-সকল দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করিয়াছেন তাহাতে পহু শব্দে চন্দ্ৰবিন্দু প্রয়োগ দেখা যাইতেছে ; এই চন্দ্ৰবিন্দু কি আপনি কোনো পুঁথিতে পাইয়াছেন। গ্রিয়ার্সন-প্রকাশিত গ্রন্থে কোথাও পহু দেখি নাই ; এবং কিছুকাল পূর্বে যে হস্তলিখিত পুঁথি দেখিয়ছিলাম তাহাতে পহু ব্যতীত কুত্ৰাপি পাই দেখি নাই। ܬܬܠ ܠܹ ভাষাবিচ্ছেদ হইয়াছে তাহার সন্দেহ নাই। প্রথমত, এক রাজার শাসনপ্রণালীর বন্ধন তো আছেই, তাহার পরে পথের সুগমতা এবং বাণিজ্য ব্যাবসা ও চাকরির টানে পরস্পরের সহিত নিয়ত সম্মিলন ঘটিতেছেই। ইহার একটা অনিবাৰ্য ফল এই ছিল যে, যে-সকল প্রতিবেশী জাতির মধ্যে প্রভেদ সামান্য তাহারা ক্রমশ এক হইয়া যাইতে পারিত। অন্তত ভাষা সম্বন্ধে তাহার উপক্রম দেখা গিয়াছিল। উড়িষ্যা এবং আসামে বাংলাশিক্ষা যেরূপ সবেগে ব্যাপ্ত হইতেছিল, বাধা না পাইলে বাংলায় এই দুই উপবিভাগ ভাষার সামান্য অন্তরালটুকু ভাঙিয়া দিয়া একদিন একগৃহবতী হইতে পারিত। সামান্য অন্তরাল এইজন্য বলিতেছি যে, বাংলাভাষার সহিত আসামি ও উড়িষ্যার যে-প্রভেদ সে-প্রভেদসূত্রে পরস্পর ভিন্ন হইবার কোনাে কারণ দেখা যায় না। উক্ত দুই ভাষা। চট্টগ্রামের ভাষা অপেক্ষা বাংলা হইতে স্বতন্ত্র নহে। বীরভূমের কথিত ভাষার সহিত ঢাকার কথিত ভাষার যে-প্রভেদ, । বাংলার সহিত আসামির প্রভেদ তাহা অপেক্ষা খুব বেশি নহে। ]