পরিশিষ্ট । শব্দতত্ব । १8१ লিখিলেও চলে ; যথা, নিম্পন্দ, নিম্পূহ, প্ৰতিমান । কিন্তু তাই বলিয়া নি উপসর্গ ও নিঃ উপসর্গ এক নহে, এমনকি, তাহাদের বিপরীত অর্থ। শ্ৰীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় প্রমাণসহ তাহার বিচার করিয়াছেন । নি উপসর্গের গতি ভিতরের দিকে, নিঃ উপসর্গের গতি বাহিরের দিকে । নিবাস এবং নির্বােসন তাহার একটা দৃষ্টান্ত। নিঃ উপসর্গের না-অৰ্থ গীেণ, তাহার মুখ্যভােব বহির্গামিতা। নিৰ্গত শব্দের অর্থনা-গত নহে, তাহার অর্থ বাহিরে গত । নিঃসৃত, বহিঃসৃত । নিক্রমণ, বহিস্ক্রমণ। নিৰ্ঘোষ, বহির্ব্যাপ্ত শব্দ। নিবার, বহিরুদগত ঝরনা। নির্মেক, খোলস যাহা বাহিরে ত্যক্ত হয়। নিরতিশয় অর্থে যে অতিশয় বাহিরে চলিয়া যাইতেছে অর্থাৎ আপনাকেও যেন অতিক্রম করিতেছে। যুরোপীয় e এবং ex উপসর্গে দেখা যায় তাহাদের মূল বহিৰ্গমন অর্থ হইতে অভাব অর্থের উৎপত্তি হইয়াছে। নিঃ উপসর্গেও তাঁহাই দেখা যায়। শব্দকল্পদ্রুম, শব্দস্তোমমহানিধি প্রভৃতি সংস্কৃত অভিধানে দেখা যায় অভাবাৰ্থক নিঃ উপসৰ্গকে নিৰ্গত শব্দের দ্বারা ব্যাখ্যা করা হইয়াছে ; যথা নিরর্গল- নিৰ্গতমগলং যস্মাৎ, নিরর্থক-- নিৰ্গতোেহর্থে যম্মাৎ ইত্যাদি । অ এবং অন্য প্রয়োগের দ্বারা বিশুদ্ধ অভাব বুঝায়, কিন্তু নিঃ প্রয়োগে ভাব হইতে বহির্শচ্যুতি বুঝায়। জার্মান ভাষায় ইহার স্বজাতীয় উপসর্গ-hin। নিঃ উপসর্গের বিসর্গ স্থানচ্যুতিবশত হি রূপে ন-এর পূর্বে বসিয়াছে, অথবা মূল আর্য ভাষায় যে-ধাতু ছিল তাহাতে হি পূর্বে ছিল, সংস্কৃতে তাহা বিসর্গরূপে পরে বসিয়াছে। Hinউপসর্গেরও বহিৰ্গমতা এবং অভাব অর্থ দেখা যায় । জার্মান অভিধান hin উপসর্গের অর্থ সম্বন্ধে বলে,motion or direction from thespeaker, gone, losti SCS (Rar f RV5 grf:rsR SR, virsir vri: সেইরূপ ein ভিতর এবংhin বাহির বুঝায়। Einfahren অর্থ ভিতরে আনা,hinfahrenশব্দের অর্থ বাহিরে লইয়া যাওয়া । লাটিন in উপসর্গে নি এবং নিঃ, ein এবং hin একত্রে সংগত হইয়াছে। innate অর্থ অন্তরে জাত, infinite অর্থ যাহা সীমার অতীত । যাহাই হউক, প্র উপসর্গের মূল অৰ্থ বাহিরে, অগ্রভাগে ; নি উপসর্গের অর্থ ভিতরে এবং নিঃ উপসর্গের অর্থ ভিতর হইতে বাহিরে । অতএব নিঃ উপসৰ্গযোগে যে-শ্বাসের অর্থ বহির্গামী শ্বাস হইবে, নি উপসৰ্গযোগে তাঁহাই অন্তৰ্গমনশীল শ্বাস বুঝাইবে । অথচ ঘটনাক্রমে শ্বাস শব্দের পূর্বে নিঃ উপসর্গের বিসর্গ লোপপ্রবণ হইয়া পড়ে। অতএব এ স্থলে বানানের উপর নির্ভর করা যায় না। ফলত সংস্কৃত ভাষায় বাহ্যবায়ুগ্রহণ অর্থে সাধারণত উপসৰ্গহীন শ্বাস শব্দই ব্যবহৃত হইয়া থাকে এবং নিশ্বাস ও প্রশ্বাস উভয় শব্দই অন্তর্বায়ুর নিঃসরণ অর্থে প্রযুক্ত হয়। দেখা গেল, “উপসর্গের অর্থবিচার’ প্ৰবেন্ধ প্র এবং নি উপসর্গের যে-অর্থ নিৰ্ণয় করা হইয়াছে, নিশ্বাস শব্দের আলোচনায় তাহার কোনো পরিবর্তন ঘটিতেছে না। প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি শব্দ লইয়া সমালোচক মহাশয় বিস্তর সূক্ষ্ম তর্ক করিয়াছেন, এ স্থলে তাহার বিস্তারিত অবতারণ ও আলোচনা বিরক্তিজনক ও নিস্ফল হইবে বলিয়া পরিত্যাগ করিলাম। পাণ্ডিত্য । অনেক সময় দুৰ্গম পথ সৃষ্টি করে এবং সত্য সরল পথ অবলম্বন করিয়া চলে। এ কথা অত্যন্ত সহজ যে, প্রবৃত্তি প্রবর্তনের দিক, অর্থাৎ মনের চেষ্টা তদ্দ্বারা বাহিরের দিকে ধাবিত হয় ; নিবৃত্তি নিবর্তনের দিক, অর্থাৎ মনের চেষ্টা তন্দ্বারা ভিতরের দিকে ফিরিয়া আসে । । সমালোচক মহাশয় প্রবৃত্তি নিবৃত্তির এই সহজ উপপত্তি পরিত্যাগপূর্বক বিশেষ জেদ করিয়া কষ্টকল্পনার পথে গিয়াছেন। তিনি বলেন, “প্রবৃত্তি কি, না প্রকৃষ্টােবৃত্তি অর্থাৎ ভালো করিয়া থাকা, এবং ক্রিয়ার অবস্থা (কুর্বদ্যবস্থা) (state of action) কোনো বস্তুর স্থিতির বা সত্তার প্রকৃষ্ট অবস্থা বলিয়া প্রকৃষ্ট বৃদ্ধি শব্দে ক্রিয়ারম্ভ বুঝাইতে পারে।” ক্রিয়ার অবস্থাই যে ভালোরাপ থাকার অবস্থা এ কথা স্বীকার করা কঠিন। নিবৃত্তি শব্দের যে ব্যুৎপত্তি করিয়াছেন তাহাও সংগত হয় নাই। তিনি বলেন, “নিতরাং বর্ততে ইতি নিবৃত্তি অর্থাৎ নিতরাং সম্পূর্ণভাবে বেষ্টদিশূন্য হইয়া স্থিতি বা থাকা অর্থাৎ চেষ্টাবিরাম ।” • সমালোচক মহাশয় প্রতিবাদ করিয়া উত্তেজনায় নিজেকে অত্যন্ত অধিক পরিমাণে প্রকৃষ্টাবৃত্তি অর্থাৎ কুর্বদ্যবস্থায় লইয়া গেছেন- এ সম্বন্ধে আর-একটু নিতরাং বর্তন করিতেও পারিতেন ; কারণ