পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় ዒb”ዒ ডাকঘর ডাকঘর ১৩১৮ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । লিখিত ও সাময়িক পত্রে প্রকাশিত হইয়াছিল, এইজন্য রচনাবলীতে উহা ডাকঘরের পূর্বে মুদ্রিত হইয়াছে । ডাকঘর রচনার স্থান-কাল সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায় মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা রবীন্দ্রনাথের পত্রে (দ্র, শারদীয় দেশ, ১৩৭৩, পত্র ৩, ৪, ৫)। ডাকঘরের স্পষ্ট উল্লেখ আছে চতুর্থ পত্রে ; এই পোস্টকার্ড সম্ভবত ১ আশ্বিন ১৩১৮ তারিখে শান্তিনিকেতন হইতে লেখা হয়। রবীন্দ্রনাথের “রাসমণির ছেলে ভারতী পত্রে ১৩১৮ আশ্বিনে প্রচারিত, এটি রচনার পূর্বেই “ডাকঘর’ রচিত, ইহাও অনুমান করার কারণ আছে। ““ডাকঘর” যখন লিখি তখন হঠাৎ আমার অন্তরের মধ্যে আবেগের তরঙ্গ জেগে উঠেছিল ।. প্রবল একটা আবেগ এসেছিল ভিতরে । চল চল বাইরে, যাবার আগে তোমাকে পৃথিবীকে প্ৰদক্ষিণ করতে হবে- সেখানকার মানুষের সুখদুঃখের উচ্ছাসের পরিচয় পেতে হবে । সে সময় বিদ্যালয়ের কাজে বেশ ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ কি হল । রাত দুটাে-তিনটের সময় অন্ধকার ছাদে এসে মনটা পাখা বিস্তার করল ।- আমার মনে হচ্ছিল একটা কিছু ঘটবে, হয়তো মৃত্যু । স্টেশনে যেন তাড়াতাড়ি লাফিয়ে উঠতে হবে সেই রকমের একটা আনন্দ আমার মনে জাগছিল । যেন এখান হতে যাচ্ছি। বেঁচে গেলুম। এমন করে যখন ডাকছেন তখন আমার দায় নেই। কোথাও যাবার ডাক ও মৃত্যুর কথা- ‘ডাকঘরে’- প্ৰকাশ করলুম।-- মনের মধ্যে যা অব্যক্ত অথচ চঞ্চল তাকে কোনো রূপ দিতে পারলে শান্তি আসে। --- এর মধ্যে গল্প নেই। এ গদ্য-লিরিক ।- আমার মনের মধ্যে বিচ্ছেদের বেদনা ততটা ছিল না । চলে যাওয়ার মধ্যে যে বিচিত্র আনন্দ তা আমাকে ডাক দিয়েছিল ।” ১৩২২ পৌঁষে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ‘র্তার নাটকের বিষয়ে ধারাবাহিক কতগুলি বক্তৃতা দিয়াছিলেন । ৪ঠা পৌষের বক্তৃতার বিষয় ছিল ডাকঘর।” স্বগীয় কালীমোহন ঘোষ উহার যে অনুলেখন রাখিয়া গিয়াছেন, উপরে তাহারই কিয়দংশ ‘রবীন্দ্রসংগীত” গ্রন্থ হইতে সংকলন করা গেল। ডাকঘর নাটক-রচনার প্রায় সমকালীন একটি পত্রে (২২ আশ্বিন ১৩১৮) এই কথাই কবির নিজের লেখায় ব্যক্ত হইয়াছে “মা, আমি দূরদেশে যাবার জন্যে প্রস্তুত হচ্চি - আমার মন এই কথা বলচে যে, যে - পৃথিবীতে জন্মেছি সেই পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে নিয়ে তবে তার কাছ থেকে বিদায় নেব । এর পরে আর তা সময় হবে না । সমস্ত পৃথিবীর নদী গিরি সমুদ্র এবং লোকালয় আমাকে ডাক দিচ্চে- আমার চারিদিকের ক্ষুদ্র পরিবেষ্টনের ভিতর থেকে বেরিয়ে পড়বার জন্যে মন উৎসুক হয়ে পড়েছে।- আমাদের কৰ্ম্ম ও সংস্কারের আবর্জনা দিনে দিনে জমে উঠে চারদিকে একটা বেড়া তৈরি করে তোলে। আমরা চিরজীবন আমাদের নিজের সেই বেড়ার মধ্যেই থাকি, জগতের মধ্যে থাকি নে । অন্ততঃ মাঝে মাঝে সেই বেড়া ভেঙে বৃহৎ জগৎটাকে দেখে এলে বুঝতে পারি। আমাদের জন্মভূমিটি কত বড়- বুঝতে পারি জেলখানাতেই আমাদের জন্ম নয়। তাই আমার সকলের চেয়ে বড় যাত্রার পূর্বে এই একটি ছোট যাত্রা দিয়ে তার ভূমিকা করতে চাচ্চি— এখন থেকে একটি একটি করে বেড়ি ভাঙতে হবে তারই আয়ােজন ।” —শ্ৰীমতী নিবরিণী সরকারকে লিখিত, পত্র ১৯, চিঠিপত্র ৭