পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় br> Q রাখিতাম, তাহা হইলে ৭০ হাজার টাকা উঠিয়াছে শুনিয়া আমাদের তেমন দুঃখ হইত না । জাতীয় ধনভাণ্ডারে অল্প টাকা উঠিয়াছে বলিয়া র্যাহারা আক্ষেপ করেন, তাহারা ভুলিয়া যান যে, এত অল্পদিনের মধ্যে আমরা পূর্বে কখনো দেশের নিকট হইতে এমনতরো উত্তর পাই নাই। আমরা সাহেবদের নিন্দাপ্রশংসাকে বড়ো ভয় করি। আমাদের ক্ষুদ্র আয়োজন দেখিয়া সাহেবরা কী মনে করিতেছে। এ বিষয়ে যদি আমরা বেশি ভাবনা না করি, তবে আমাদের নিজের যাহা সাধ্য তাহা অনেকটা শান্তি ও উৎসাহের সঙ্গে করিয়া উঠিতে পারিব । যোগানের সম্বন্ধে তিনি বলেন যে, আজ যদি যথার্থই আমাদের প্রয়োজন উপস্থিত হইয়া থাকে, তবে দেশের ব্যবসায়াবুদ্ধি আপনা। আপনি আমাদের অভাবমোচনে নিযুক্ত হইবে। এত আন্দােলনেও তেমন কোনাে কাজ দেখা যাইতেছে না বলিয়া কেহ কেহ যে আক্ষেপ করিতেছেন সে-সম্বন্ধে তিনি বলেন যে, প্রথম-উত্তেজনার আবেগ কতকটা শাস্ত হইয়া এখন কার্যের সময় আসিয়াছে। এখন নিঃসন্দেহেই অনেকে নীরবে কাজ করিতেছেন, সুতরাং আমাদের নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নাই। বর্তমান শিক্ষাসমস্যা সম্বন্ধে তিনি বলেন যে, গবর্মেন্ট যদি দুই দিন পরে এই পরোয়ানা প্রত্যাহারও করেন, তবু যেন আমরা ইহার শিক্ষাটি কখনো ভুলিয়া না। যাই । আমাদের শিক্ষাকে স্বাধীন করিবার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করিবার সময় এখন উপস্থিত হইয়াছে। ছাত্রেরা ধীরভাবে বিচার করিয়া দেখিবেন যে, তাহারা সত্যসত্যই গবর্মেন্টের সম্মান এবং চাকুরির মায়া পরিত্যাগ করিবার জন্য প্ৰস্তুত আছেন কি না । যদি তাহারা যথার্থই প্ৰস্তুত হইয়া থাকেন। তবে নেতৃবর্গ নিঃসন্দেহ তাহাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করিবেন। ১৯শে কার্তিক [:১৩১২] অপরাহুে “ডন সোসাইটিতে একটি ছাত্রসভার অধিবেশন হয় ।-- শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [[বর্তমান শিক্ষাসমস্যা সম্বন্ধে] আলোচনা উত্থাপন করিয়া বলেন যে, বাংলাদেশে আজ যে-নবজীবনের উত্তেজনা লক্ষিত হইতেছে, তাহা দুই ভাগে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে- বিদেশী পণ্য বর্জনের সংকল্পে এবং স্বদেশের শিক্ষাকে স্বাধীন করিবার আকাঙক্ষায় । কিরূপে স্বদেশী দ্রব্যের অভাবমোচন হইবে, তাহা ধীরভাবে চিন্তা না করিয়াই যেমন আমরা বিদেশী পণ্য বর্জনের সংকল্প করিয়াছিলাম, তেমনই বিশুদ্ধ উৎসাহের সহিত যদি আজ আমরা স্বদেশের শিক্ষার ভার স্বহস্তে গ্ৰহণ করি, তবে আরম্ভ যত সামান্যই হউক-না কেন আমরা ভবিষ্যতে নিঃসন্দেহ সফলতা লাভ করিতে পারিব । ছাত্রেরা যদি গবমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অপমান সহ্য করিতে না পারিয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুত হইয়া থাকেন, তবে র্তাহাদের সংকল্প দৃঢ় রাখিবেন । তাহা হইলে নেতারাও তাঁহাদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করিয়া থাকিতে পরিবেন না । কিন্তু ছাত্ৰগণের এ কথা স্মরণ রাখিতে হইবে যে, এ উদ্যোগে প্ৰথমেই আকাঙক্ষার অনুরূপ ফল লাভের আশা করা যাইতে পারে না ।** শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাত্ৰগণের প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে তাহার বিশ্বাস যে, ছাত্রগণ সংকল্পে দৃঢ় থাকিলে নেতারা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করিবেন। এখনো এ বিষয়ে কথাবার্তা ১৪ “অতঃপর শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রবাবুর আহবানে যুবকদের মধ্যে নরেশচন্দ্র সেন, অতুলচন্দ্র গুপ্ত, নৃসিংহচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মহিমচন্দ্র রায়, চুনীলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত এ বিষয়ের কিছু কিছু আলোচনা করেন । তঁহাদের আলোচনায় প্রকাশ পায় যে, এ বিষয়ে নেতৃবৰ্গকে প্ৰথমে অগ্রসর হইতে হইবে, প্ৰস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবিকোপার্জনের কোনো ব্যবস্থা করিতে হইবে, এবং অভিভাবকগণের মত প্ৰথমে গঠিত করিতে হইবে । ‘অভিভাবকগণের সম্মতি যদি না পাওয়া যায়। তবে কী করা কর্তব্য ।” ‘ইন্জিনিয়ারিং ডাক্তারি ও ভূবিদ্যা শিক্ষার ব্যবস্থা যদি নববিশ্ববিদ্যালয় প্রথমেই না করিয়া উঠিতে পারেন, তবে ছাত্রেরা কী করিবেন।” “ছাত্রেরা তো প্রস্তুত আছেন নেতারা কতদূর অগ্রসর হইলেন।’ ইত্যাদি প্রশ্নও উত্থাপিত হয় ।” -