পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brNqNq রবীন্দ্র-রচনাবলী সতীশচন্দ্ৰ বিদ্যাভূষণ**, গুরুদাস-বন্দ্যোপাধ্যায়** ও হীরেন্দ্রনাথ দত্ত “ (সভাপতি) যোগদান করেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উক্ত আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন : ৩৩ বাংলাভাষার গতিনির্দেশ ও লক্ষ্যকারীদিগের দুই দল। এক দলের নেতা রবীন্দ্রবাবু। সামান্য হইতে উচ্চশ্রেণীর লোকে কথাবার্তার ভাষায় যে-সকল শব্দ ব্যবহার করে, সেগুলি লেখার ভাষায় আমরা ব্যবহার করি না । তৎপরিবর্তে অন্য শব্দ সৃষ্টি করিয়া যদি ব্যবহার করি।- তাহা হইলে ভাষার জীবনীশক্তি থাকে না । কথিত ভাষার শব্দের শক্তি ও মাধুর্য রবীন্দ্ৰবাবু দ্বারা প্ৰকাশিত হইতেছে, তিনি তাহা অনুভব করিয়াছেন । তাহার “ফবন্যাত্মিক শব্দ’ প্ৰভৃতি প্ৰবন্ধ ইহারই ফল । এ-সকল চলিত কথার শব্দ প্ৰদেশভেদে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ধ্বন্যাত্মিক শব্দ পরিবর্তনশীল । সংস্কৃতসাহিত্যেও অল্পসংখ্যক ধন্বন্যাত্মিক শব্দ দেখা যায় । এই সকল ধবিন্যাত্মিক শব্দ সাহিত্যে ব্যবহার করা বড়ো কঠিন । ধন্বন্যাত্মিক শব্দগুলি জীবিত শব্দ । সেগুলিকে রবীন্দ্ৰবাবুর। কথিত নিয়মাদি দ্বারা শ্রেণীবদ্ধ করিয়া ব্যাকরণের আবরণ দিয়া পাঠ করিতে গেলে, তাহাদের মাধুর্য নষ্ট হইবে বলিয়া মনে হয়। এ যুগের শব্দ রহস্য সংগৃহীত হউক, কিন্তু সাহিত্যে তাঁহাদের বহুল ব্যবহার প্রার্থনীয় নহে!- সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ । ৩৪ আমিও রবীন্দ্ৰবাবুকে তাহার এই অপূর্ব গবেষণামূলক প্রবন্ধের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাইতেছি । আপনারা জোড়াতাড়া দিয়া লাউন । ভাষার ইঙ্গিত সকল বিষয়েই আছে। ভাষাতত্ত্ববিদেরা বলেন, এই সকল ধ্বন্যািত্মক শব্দ দ্বিবিধ, এক দল বলেন জন্তু ধ্বনি হইতে, অপর দল বলেন মনুষ্যধ্বনি TROSS Georg || BTRACYFI TRGfè a N Bow-ow Theory es Pugh-Pugh Theory || Såleri লব্ধপ্ৰতিষ্ঠ কবি আর জগদীশবাবু লব্ধপ্রতিষ্ঠ বৈজ্ঞানিক । জগদীশবাবু বলেন, এমন অনেক রঙ আছে যাহা এ চোখে দেখা যায় না- এ চোখের ততটা বোধশক্তি নাই । শক্তির বৃদ্ধি হইলে আবার এই চোখেই দেখা যায় । অব্যক্ত ধবনির শব্দগুলির রহস্যবোধ সেইরাপ সকলের কানে হয় না । যে-কোনের বোধশক্তি বধিত সে-কনে হয়, কবি রবীন্দ্ৰবাবুর তাহা হইয়াছে। বিদ্যাভূষণ মহাশয় উহাদের ক্ষণভঙ্গুর বলিয়া মনে করেন । যদিই তাহা হয় তবে একটা-দুইটা হইতে পারে, কিন্তু তাহাদের দল সমস্তই নহে। বিদ্যাভূষণ মহাশয় উহাদের বহুল ব্যবহার ইচ্ছা করেন না। তিনি না করিলেও লিখিত ভাষায় উহাদের প্রয়ােজন আছে। নাটকে তাহার যথেষ্ট উদাহরণ দেখা যায়। অপণ্ডিত ব্যক্তির কথোপকথন লিপিবদ্ধ করিতে হইলে উহাদের প্রয়োজন । এই সকল শব্দ এত ছোটো যে, দু-একজন সহৃদয় কবি ইহাদের স্বরূপ দেখিতে চাহেন না। রবিবাবু একজন বৈজ্ঞানিক কবি । তিনি ইহাদের স্বরূপ যেভাবে দেখাইয়াছেন, তাহাতে উহাদের আর ছোট্যত্ব নাই। তবে রবীন্দ্রবাবু বড়ো নজরে উহাদিগকে যতই ছোটাে দেখুন, আমাদের কাছে এগুলি এখন অতি বড়ো জিনিস। ভাষায় প্রাকৃতিত্ব এখন উহাদের উপরে নির্ভর করিতেছে। রবীন্দ্ৰবাবুর একটা কথার সহিত আমার মতভেদ আছে। বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় যে-সম্বন্ধ তাহা দেহ-পরিচ্ছদ সম্বন্ধ নহে ; দেহের উৎকৃষ্ট অংশ বটে। দেহ-পরিচ্ছদ সম্বন্ধ হইলে বাংলাভাষাকে শবদেহ বলিতে হয়, কিন্তু তাহা নহে। জীবনীশক্তি বাংলাতেও আছে। শব্দরূপ, ধাতুরূপ, সব বাংলা । কোনোটা একটু বধিত কোনোটা একটু কর্তিত, ইহা দ্বারা আমি যেমন বাংলাভাষাকে একটু বাড়াইলাম তেমনই একটু কমাইয়াও দিলাম। তর্কের খাতিরে কাহাকেও অপদস্থ করিতে নাই। যাহার যে নাম সেই নামে ডাকিলে শীঘ্ৰ ডাক LB DD SS SS L DBELSSSS S ৩৫। প্ৰবন্ধপাঠকের সহিত আমার একটা বিশেষ মতভেদ আছে। তিনি বলেন, এই সকল বিষয় অকিঞ্চিৎকর ও বিস্মরণযোগ্য, আমি তাহা কিছুতেই স্বীকার করি না। অন্য কোনো বিষয়ে আমার সহিত তাহার কোনো মতভেদ নাই। তাহার প্রবন্ধ রচনানির্দেশের নিয়মপ্রকাশক নহে। বিদ্যাভূষণ মহাশয় আশঙ্কিত হইয়াছেন কেন বলিতে পারি না। সংস্কৃত ছাড়িয়া বাংলাভাষা চলে না, কিন্তু তাই বলিয়া সংস্কৃতের অনাবশ্যক প্রলেপ দিয়া বাংলাকে ভারাক্রান্ত করিবার আকশ্যক কী । রবীন্দ্ৰবাবু যে-সকল শব্দ সম্বন্ধে আজ নানাবিধ তথ্য প্রকাশ করিলেন, বিদ্যাভূষণ মহাশয় তাহাদিগকে ভঙ্গুর বলিতেছেন কেন । কতকগুলি শব্দ কেন, সমস্ত ভাষাই তো ভঙ্গুর। সংস্কৃতসাহিত্যের বৈদিক শব্দই আর এখন কি ব্যবহার