পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী নিশাচরের ডানার ঝাপট আকাশে আকাশে নিশীথিনীর হৃৎকম্পনের মতো । ধকধক ধকধক আঘাতে খানখান হল দ্বারের আগল, কপাট পড়ল ভেঙে। কম্পমান কণ্ঠে প্রাণ বললে, হে মাটি, হে নিষ্ঠুর, কী চাও তুমি ? দূত বললে, আমি চাই দেহ। দীর্ঘনিশ্বাস ফেললে প্রাণ ; বললে, এতকাল আমার লীলা এই দেহে, এর অণুতে অণুতে আমার নৃত্য, নাড়ীতে নাড়ীতে ঝংকার, মুহূর্তেই কি উৎসব দেবে ভেঙে— দীর্ণ হয়ে যাবে বঁশি, চূর্ণ হয়ে যাবে মৃদঙ্গ, ' ডুবে যাবে এর দিনগুলি অতল রাত্রির অন্ধকারে ? দূত বললে, ঋণে বোঝাই তোমার এই দেহ, শোধ করবার দিন এল— মাটির ভাণ্ডারে ফিরবে তোমার দেহের মাটি । প্রাণ বললে, মাটির ঋণ শোধ করে নিতে চাও, নাও— কিন্তু তার চেয়ে বেশি চাও কেন ? দূত বিদ্রপ করে বললে, এই তো তোমার নিঃস্ব দেহ, কৃশ ক্লাস্ত কৃষ্ণচতুর্দশীর চাদ– এর মধ্যে বাহুল্য আছে কোথায় ? প্রাণ বললে, মাটিই তোমার, রূপ তো তোমার নয় । অট্টহাস্তে হেসে উঠল দূত ; বললে, যদি পার দেহ থেকে রূপ নাও ছাড়িয়ে । প্রাণ বললে, পারবই, এই পণ আমার ! প্রাণের মিতা মন । সে গেল আলোক-উৎসের তীর্থে।