পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী f ভ্র কুটিল করে মহিষী বললে, ‘অসুন্দরের জন্যে তোমার এই অমুকম্পার অর্থ বুঝি নে । ঐ শোনো, উষার প্রথম কোকিলের ডাক, অন্ধকারের মধ্যে তার আলোকের অনুভূতি । আজ স্বর্যোদয়মুহূর্তে তোমারও প্রকাশ হবে আমার দিনের মধ্যে, এই আশায় রইলাম।” রাজা বললে, “তাই হোক, ভীরুতা যাক কেটে । দেখা হল । ট’লে উঠল যুগলের সংসার। ‘কী অন্যায়— কী নিষ্ঠুর বঞ্চনা' বলতে বলতে কমলিক ঘর থেকে ছুটে পালিয়ে গেল । গেল বহুদূরে বনের মধ্যে মৃগয়ার জন্যে যে নির্জন রাজগৃহ আছে সেইখানে । কুয়াশায় শুকতারার মতো লজ্জায় সে আচ্ছন্ন । রাত্রি যখন দুই প্রহর তখন আধ-ঘুমে সে শুনতে পায় এক বীণাধবনির আর্তরাগিণী । স্বপ্নে বহুদূরের আভাস আসে, মনে হয় এই স্বর চিরদিনের চেন । রাতের পরে রাত গেল । অন্ধকারে তরুতলে যে মানুষ ছায়ার মতো নাচে তাকে চোখে দেখে না, তাকে হৃদয়ে দেখা যায়— যেমন দেখা যায় জনশূন্ত দেওদার বনের দোলায়িত শাখায় দক্ষিণসমুদ্রের হাওয়ার হাহাকার-মূতি । এ কী হল রাজমহিষীর । কোন হতাশের বিরহ তার বিরহকে জাগিয়ে তোলে ! মাটির প্রদীপ-শিখায় সোনার প্রদীপ জলে উঠল বুঝি । রাতজাগা পাখি নিস্তব্ধ নীড়ের পাশ দিয়ে হুহু করে উড়ে যায়, তার পাথার শব্দে ঘুমন্ত পাখির পাখা উংস্থক হয়ে ওঠে যে।