পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী دهد বিপিন । তোমার সন্ন্যাসীর ষেরকম চেহারা গলা এবং আসবাবের প্রয়োজন আমার তো তার কিছুই নেই। তবে তল্পিদার হয়ে পিছনে যেতে রাজি আছি। কানে যদি সোনার কুণ্ডল, অন্তত চোখে যদি সোনার চশমাট পরে যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াও তা হলে একটা প্রহরীর দরকার, সে কাজটা আমার দ্বারা কতকটা চলতে পারবে। শ্ৰীশ । আবার ঠাট । বিপিন। না ভাই, ঠাট নয়। আমি সত্যিই বলছি, তোমার প্রস্তাবটাকে যদি সম্ভবপর করে তুলতে পার তা হলে খুব ভালোই হয়। তবে এরকম একটা সম্প্রদায়ে সকলেরই কাজ সমান হতে পারে না, যার যেমন স্বাভাবিক ক্ষমতা সেই অনুসারে যোগ দিতে পারে । শ্ৰীশ । সে তো ঠিক কথা। কেবল একটি বিষয়ে আমাদের খুব দৃঢ় হতে হবে, স্ত্রীজাতির কোনো সংস্রব রাখব না । বিপিন। মাল্যচন্দন অঙ্গদকুণ্ডল সবই রাখতে চাও, কেবল ওই একটা বিষয়ে এত বেশি দৃঢ়তা কেন ? শ্ৰীশ । ওইগুলো রাখছি বলেই দৃঢ়ত । যেজন্যে চৈতন্য তার অনুচরদের স্ত্রীলোকের সঙ্গ থেকে কঠিন শাসনে দূরে রেখেছিলেন। তার ধর্ম অনুরাগ এবং সৌন্দর্যের ধর্ম, সেজন্যেই তার পক্ষে প্রলোভনের ফাদ অনেক ছিল । বিপিন। তা হলে ভয়টুকুও আছে। শ্ৰীশ । আমার নিজের জন্যে লেশমাত্র নেই। আমি আমার মনকে পৃথিবীর বিচিত্র সৌন্দর্যে ব্যাপ্ত করে রেখে দিই, কোনো একটা ফদে আমাকে ধরে কার সাধ্য ? কিন্তু তোমরা যে দিনরাত্রি ফুটবল টেনিস ক্রিকেট নিয়ে থাক, তোমরা একবার পড়লে ব্যাটুবল গুলিডাগু সবসুদ্ধ ঘাড়-মোড় ভেঙে পড়বে। বিপিন । আচ্ছা ভাই, সময় উপস্থিত হলে দেখা যাবে। শ্ৰীশ । ও কথা ভালো নয়। সময় উপস্থিত হবে না, সময় উপস্থিত হতে দেব না সময় তে রথে চড়ে আসেন না, আমরা তাকে ঘাড়ে করে নিয়ে আসি ; কিন্তু তুমি যে সময়টার কথা বলছ তাকে বাহন-অভাবে ফিরতেই হবে । পূৰ্ণবাবুর প্রবেশ ভয়ে। এসে পূর্ণবাবু। বিপিন তাহাকে কোরাটা ছাড়িয়া দিয়া একটা চৌকি টানিয়া লইয়া বসিল পূর্ণ। তোমাদের এই বারান্দায় জ্যোৎস্নাটি তো মন্দ রচনা কর নি, মাঝে মাঝে থামের ছায় ফেলে ফেলে সাজিয়েছ ভালো ।