পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা २8७ মুখ অঙ্ক প্রথম দৃশ্য অক্ষয়ের বাসা রসিক ও শৈলবালা রসিক । ভাই শৈল । শৈলবালা । কী রসিকদাদা । রসিক । একি আমার কাজ । মহাদেবের তপোভঙ্গের জন্যে স্বয়ং কন্দপদেব ছিলেন আর আমি বৃদ্ধ— শৈলবালা । তুমি তো বৃদ্ধ, তেমনি যুবক দুটিও তো যুগল মহাদেব নন। রসিক । তা নন, সে আমি বেশ ঠাওর করেই দেখেছি। সেইজন্যেই তো নিৰ্ভয়ে এসেছিলুম। কিন্তু, তাদের সঙ্গে রাস্তার মধ্যে হিমে দাড়িয়ে অর্ধেক রাত পর্যন্ত রসালাপ করবার মতো উত্তাপ আমার শরীরে তো নেই । শৈলবালা । তাদের সংসর্গে উত্তাপ সঞ্চয় করে নেবে। রসিক। সজীব গাছ যে সূর্যের তাপে প্রফুল্ল হয়ে ওঠে মরা কাঠ তাতেই ফেটে যায়, যৌবনের উত্তাপ বুড়ো মানুষের পক্ষে ঠিক উপযোগী বোধ হয় না। শৈলবালা। কই, তোমাকে দেখে ফেটে যাবে বলে তো বোধ হচ্ছে না। রসিক। হৃদয়ট দেখলে বুঝতে পারতিস ভাই । শৈলবালা। কী বল রসিকদা। তোমারই তো এখন সব চেয়ে নিরাপদ বয়েস। যৌবনের দাহে তোমার কী করবে। রসিক। শুষ্কেন্ধনে বহিরুপৈতি বৃদ্ধিম্। যৌবনের দাহ বৃদ্ধকে পেলেই হুহুঃশব্দে জলে ওঠে— সেইজন্তেই তো বৃদ্ধস্ত তরুণী ভার্ষা বিপত্তির কারণ। কী আর বলব ভাই । নীরবালার প্রবেশ রসিক। আগচ্ছ বরদে দেবি। কিন্তু, বর তুমি আমাকে দেবে কি না জানি নে, আমি তোমাকে একটি বর দেবার জন্যে প্রাণপাত করে মরছি। শিব তো কিছুই করছেন না, তবু তোমাদের পুজো পাচ্ছেন; আর এই যে বুড়ো খেটে মরছে একি কিছুই পাবে না । নীরবালা । শিব পান ফুল, তুমি পাবে তার ফল– তোমাকেই বরমাল্য দেব রসিকদাদা ।