পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা & ዓፄ নীরবালা। অকারণে প্রাণিহত্যা করবার জন্যে আমাদের এত উৎসাহ নেই। অক্ষয় । জীবের প্রতি কী দয়া ! কিন্তু, সামান্য ব্যাপার নিয়ে গৃহবিচ্ছেদ করবার দরকার কী। তোদের মা দিদি যখন ধরে পড়েছেন এবং ভদ্রলোক দুটি যখন গাড়িভাড়া করে আসছে তখন একবার মিনিট-পাচেকের মতো দেখা দিস, তার পরে আমি আছি— তোদের অনিচ্ছায় কোনোমতেই বিবাহ দিতে দেব না। নীরবালা । কোনোমতেই না ? অক্ষয় । কোনোমতেই না । পুরবালার প্রবেশ পুরবালা । আয়, তোদের সাজিয়ে দিই গে। নীরবালা । আমরা সাজব না । পুরবালা । ভদ্রলোকদের সামনে এইরকম বেশেই বেরোবি! লজ্জা করবে না ! নীরবাল । লজ্জা করবে বৈকি দিদি, কিন্তু সেজে বেরোতে আরও বেশি লজ্জা করবে । অক্ষয় । উমা তপস্বিনীবেশে মহাদেবের মনোহরণ করেছিলেন, শকুন্তলা যখন দুষ্মন্তের হৃদয় জয় করেছিল তখন তার গায়ে একখানি বাকল ছিল— কালিদাস বলেন, সেও কিছু অঁাট হয়ে পড়েছিল— তোমার বোনেরা সেই-সব পড়ে সেয়ানা হয়ে উঠেছে, সাজতে চায় না | পুরবালা। সে-সব হল সত্যযুগের কথা। কলিকালের দুষ্মন্ত মহারাজারা সাজ-সজ্জাতেই ভোলেন । অক্ষয় । যথা— পুরবালা । যথা তুমি। যেদিন তুমি দেখতে এলে, মা বুঝি আমাকে সাজিয়ে দেন নি ? অক্ষয় । আমি মনে মনে ভাবলেম, সাজেও যখন একে সেজেছে তখন সৌন্দর্যে না জানি কত শোভা হবে । পুরবালা। আচ্ছা, তুমি থামে। নীরু, আয়। নীরবালা । না ভাই দিদি— পুরবালা । আচ্ছ, সাজ নাই করলি, চুল তো বাধতে হবে ? অক্ষয় – গান অলকে কুসুম না দিয়ে, শুধু শিথিল কবরী বাধিয়ো ।