পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ولده " ফুলটা ফলট পাড়িয়া দেয়, শিকার করিয়া আনে, একটা-কিছু কাজ করিতে ডাকিলে ছুটিয়া আসে। অনেকবার মনে করি উহাকে শাসন করিব। কিন্তু সে চেষ্টা বৃথা । যদি খুব চোখ রাঙাইয়া বলি, দালিয়া, তোমার প্রতি আমি ভারী অসন্তুষ্ট হইয়াছি— দালিয়া মুখের দিকে চাহিয়া পরম কৌতুকে নিঃশব্দে হাসিতে থাকে। এদের দেশে পরিহাস বোধ করি এই রকম ; দু-ঘা মারিলে ভারী খুশি হইয় উঠে, তাহাও পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি। ওই দেখে-না, ঘরে পুরিয়া রাখিয়াছি— বড়ো আনন্দে আছে, দ্বার খুলিলেই দেখিতে পুাইব মুখ চক্ষু লাল করিয়া মনের সুখে আগুনে ফু দিতেছে। ইহাকে লইয়া কী করি বলতে বোন। আমি তো আর পারিয়া উঠি না।’ জুলিখা কহিল, ‘আমি চেষ্টা দেখিতে পারি।’ আমিন হাসিয়া মিনতি করিয়া বলিল, “তোর দুটি পায়ে পড়ি বোন। ওকে আর তুই কিছু বলিস না। এমন করিয়া বলিল, যেন ওই যুবকটি আমিনার একটি বড়ে সাধের পোষা হরিণ, এখনো তাহার বন্য স্বভাব দূর হয় নাই– পাছে অন্য কোনো মানুষ দেখিলে ভয় পাইয়া নিরুদ্দেশ হয় এমন আশঙ্কা আছে । এমন সময় ধীবর আসিয়া কহিল, ‘আজ দালিয়া আসে নাই তিন্নি ? ‘আসিয়াছে।’ ‘কোথায় গেল |’ সে বড়ো উপদ্রব করিতেছিল, তাই তাহাকে ওই ঘরে পুরিয়া রাখিয়াছি।’ বৃদ্ধ কিছু চিস্তান্বিত হইয়া কহিল, যদি বিরক্ত করে সহিয়া থাকিস। অল্প বয়সে অমন সকলেই দুরন্ত হইয়া থাকে। বেশি শাসন করিস না। দালিয়া কাল এক থলু দিয়া আমার কাছে তিনটি মাছ লইয়াছিল । ( থলু অর্থে স্বর্ণমুদ্রা) আমিনা কহিল, ‘ভাবনা নাই বুঢ়া, আজ আমি তাহার কাছে দুই থলু আদায় করিয়া দিব, একটিও মাছ দিতে হইবে না।’ বৃদ্ধ তাহার পালিত কন্যার এত অল্প বয়সে এমন চাতুরী এবং বিষয়বুদ্ধি দেখিয়া পরম গ্রত হইয় তাহার মাথায় সস্নেহ হাত বুলাইয়া চলিয়া গেল। চতুর্থ পরিচ্ছেদ আশ্চর্য এই, দালিয়ার আসা যাওয়া সম্বন্ধে জুলিখার ক্রমে আর আপত্তি রহিল না। বিয়া দেখিলে, ইহাতে আশ্চর্য নাই। কারণ, নদীর যেমন এক দিকে স্রোত এবং আর-এক দিকে কুল, রমণীর সেইরূপ হৃদয়াবেগ এবং লোকলজ্জা। কিন্তু, সভ্যসমাজের বাহিরে আরাকানের প্রান্তে এখানে লোক কোথায় । י W5