পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిషి 9 রবীন্দ্র-রচনাবলী যথাকালে শিবিকাদ্বয় তোরণদ্বার অতিক্রম করিয়া অন্তঃপুরে প্রবেশ করিল। দুই ভগ্নী শিবিক ত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিল । আমিনার মুখে হাসি নাই, চোখেও অশ্রুচিহ্ন নাই। জুলিথার মুখ বিবর্ণ। কর্তব্য যখন দূরে ছিল ততক্ষণ তাহার উৎসাহের তীব্রত ছিল— এখন সে কম্পিতহদয়ে ব্যাকুল স্নেহে আমিনাকে আলিঙ্গন করিয়া ধরিল। মনে মনে কহিল, নিব প্রেমের বৃন্ত হইতে ছিন্ন করিয়া এই ফুটন্ত ফুলটিকে কোন রক্তস্রোতে ভাসাইতে যাইতেছি।’ কিন্তু তখন আর ভাবিবার সময় নাই। পরিচারিকাদের দ্বারা নীত হইয়া শত সহস্ৰ প্রদীপের অনিমেষ তীব্র দৃষ্টির মধ্য দিয়া দুই ভগিনী স্বপ্নাহতের মতো চলিতে লাগিল, অবশেষে বাসরঘরের দ্বারের কাছে মুহূর্তের জন্য থামিয়া আমিনা জুলিখাকে কহিল, ‘দিদি ’ জ্বলিখা আমিনাকে গাঢ় আলিঙ্গনে বাধিয়া চুম্বন করিল। উভয়ে ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করিল। রাজবেশ পরিয়া ঘরের মাঝখানে মছলন্দ-শয্যার উপর রাজা বসিয়া আছে । আমিন সসংকোচে দ্বারের অনতিদূরে দাড়াইয়া রহিল । জুলিখা অগ্রসর হইয়া রাজার নিকটবর্তী হইয়া দেখিল, রাজা নিঃশব্দে সকৌতুকে হাসিতেছেন। জুলিখা বলিয়া উঠিল 'দালিয়া – আমিনা মূৰ্ছিত হইয়া পড়িল । দালিয়া উঠিয়া তাহাকে আহত পাখিটির মতে কোলে করিয়া তুলিয়া শয্যায় লইয়৷ গেল। আমিন সচেতন হইয়া বুকের মধ্য হইতে ছুরিটি বাহির করিয়া দিদির মুখের দিকে চাহিল, দিদি দালিয়ার মুখের দিকে চাহিল, দালিয়া চুপ করিয়া হাস্যমুখে উভয়ের প্রতি চাহিয়া রহিল— ছুরিও তাহার খাপের মধ্য হইতে একটুখানি মুখ বাহির করিয় এই রঙ্গ দেখিয়া ঝিকমিক্‌ করিয়া হাসিতে লাগিল । so মাঘ ১২৯৮