পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ \SYS)\S) পরিপাক করিয়া অবশেষে বলিল, “বাবা, আমি সন্ন্যাসী হয়েছি, আমি অস্তঃপুরে ঢুকতে পারব না ? * ষষ্ঠীচরণ পাড়ার লোকদের সম্বোধন করিয়া বলিল, তা হলে আপনাদের একবার গা তুলতে হচ্ছে । বউমাদের এইখানেই নিয়ে আসি। তারা বড়ো ব্যাকুল হয়ে আছেন।” সকলে উঠিয়া গেল। ফকির ভাবিল, এইবেল। এখান হইতে এক দৌড় মারি । কিন্তু, রাস্তায় বাহির হইলেই পাড়ার লোক কুকুরের মতো তাহার পশ্চাতে ছুটিবে ইহাই কল্পনা করিয়। তাহাকে নিস্তব্ধভাবে বসিয়া থাকিতে হইল । যেমনি মাখনলালের দুই স্ত্রী প্রবেশ করিল ফকির অমনি নতশিরে তাহাদিগকে প্রণাম করিয়া কহিল, ‘মা, আমি তোমাদের সন্তান । অমনি ফকিরের নাকের সম্মুখে একটা বাল-পরা হাত খড়গের মতো খেলিয়া গেল এবং একটি কাংস্তবিনিন্দিত কণ্ঠে বাজিয়া উঠিল, ‘ওরে ও পোড়াকপালে মিন্সে, তুই মা বললি কাকে !’ অমনি আর-একটি কণ্ঠ আরো দুই স্বর উচ্চে পাড়া কাপাইয়া ঝংকার দিয়া উঠিল, 'চোখের মাথা খেয়ে বসেছিস ! তোর মরণ হয় না !? নিজের স্ত্রীর নিকট হইতে এরূপ চলিত বাংলা শোনা অভ্যাস ছিল না, সুতরাং একান্ত কাতর হইয় ফকির জোড়হস্তে কহিল, আপনার ভুল বুঝছেন। আমি এই আলোতে দাড়াচ্ছি, আমাকে একটু ঠাউরে দেখুন। প্রথম ও দ্বিতীয় পরে পরে কহিল, ঢের দেখেছি। দেখে দেখে চোখ ক্ষয়ে গেছে। তুমি কচি থোকা নও, আজ নতুন জন্মাও নি। তোমার দুধের দাত অনেক দিন ভেঙেছে। তোমার কি বয়সের গাছ-পাথর আছে। তোমায় যম ভুলেছে বলে কি আমরা डूलद ।' এরূপ এক-তরফা দাম্পত্য আলাপ কতক্ষণ চলিত বলা যায় না— কারণ, ফকির একেবারে বাকশক্তিরহিত হইয়া নতশিরে দাড়াইয়া ছিল। এমন সময় অত্যন্ত কোলাহল শুনিয়া এবং পথে লোক জমিতে দেখিয়া ষষ্ঠীচরণ প্রবেশ করিল। বলিল, এতদিন আমার ঘর নিস্তব্ধ ছিল, একেবারে টু শব্দ ছিল না। আজ মনে হচ্ছে বটে, আমার মাখন ফিরে এসেছে।’ d ফকির করজোড়ে কহিল, মশায়, আপনার পুত্রবধূদের হাত থেকে আমাকে রক্ষে করুন ? ষষ্ঠী। বাবা, অনেক দিন পরে এসেছ, তাই প্রথমটা একটু অসহ বোধ হচ্ছে। ত, মা,