পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

st- রবীন্দ্র-রচনাবলী মানুষ এমনি করেই তো আপনার মনের মানুষের সন্ধান করছে। এমনি করেই তো তার সমস্ত দুঃসাধ্য সাধনার ভিতর দিয়েই যুগে যুগে সেই মনের মানুষ প্রত্যক্ষ হয়ে উঠছে। যতই তাকে পাচ্ছে ততই বলছে ‘আমি কোথায় পাব তারে । সেই মনের মানুষকে নিয়ে মানুষের মিলন বিচ্ছেদ একাধারেই ; তাকে পাওয়ার মধ্যেই র্তাকে না-পাওয়া । সেই পাওয়া না-পাওয়ার নিত্য টানেই মানুষের নব নব ঐশ্বৰ্যলাভ, জ্ঞানের অধিকারের ব্যাপ্তি, কর্মক্ষেত্রের প্রসার— এক কথায়, পূর্ণতার মধ্যে অবিরত আপনাকে নব নব রূপে উপলব্ধি। অসীমের সঙ্গে মিলনের মাঝখানেই এই-যে একটি চিরবিরহ আছে এ বিরহ তো কেবল রসের বিরহ নয়, কেবল ভাবের দ্বারাই তো এর পূর্ণত হতে পারে না, জ্ঞানে কর্মেও এই বিরহ মানুষকে ডাক দিয়েছে— ত্যাগের পথ দিয়ে মানুষ অভিসারে চলেছে। জ্ঞানের দিকে, শক্তির দিকে, প্রেমের দিকে, যে দিকেই মানুষ বলেছে ‘আমি চিরকালের মতো পোঁচেছি’ ‘আমি পেয়ে বসে আছি, এই বলে যেখানেই সে তার উপলব্ধিকে নিশ্চলতার বন্ধন দিয়ে বাধতে চেয়েছে, সেইখানেই সে কেবল বন্ধনকেই পেয়েছে, সম্পদকে হারিয়েছে, সে সোনা ফেলে আঁচলে গ্রস্থি দিয়েছে। এই-যে তার চিরকালের গান : আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে! এই প্রশ্ন যে তার চিরদিনের প্রশ্ন : মনের মানুষ যেখানে বলে কোন সন্ধানে যাই সেখানে ! কেননা, সন্ধান এবং পেতে থাকা এক সঙ্গে ; যখনই সন্ধানের অবসান তখনই উপলব্ধির বিকৃতি ও বিনাশ । এই মনের মানুষের কথা বেদমন্ত্রে আর-এক রকম করে বলা হয়েছে। তাকে বলেছে ‘পিতা নোহসি, তুমি আমাদের পিতা হয়ে আছ। পিতা যে মানুষের সম্বন্ধ ; কোনো অনন্ত তত্ত্বকে তো পিতা বলা যায় না । অসীমকে যখন পিতা বলে ডাকা হল তখন তাকে আপন ঘরের ডাকে ডাকা হল । এতে কি কোনো অপরাধ হল । এতে কি সত্যকে কোথাও খাটো করা হল । কিছুমাত্র না। কেননা, আমার ঘর ছেড়ে তিনি তো শূন্ততার মধ্যে লুকিয়ে নেই। আমার ঘরটিকে তিনি যে সকল রকম করেই ভরেছেন। মাকে যখন মা বলেছি তখন পরম মাতাকে ডাকবার ভাষাই যে অভ্যাস করেছি ; মানুষের সকল সম্বন্ধের ভিতর দিয়েই যে র্তার সঙ্গে আনাগোনার দরজা একটি একটি করে খোলা হয়েছে ; মানুষের সকল সম্বন্ধের ভিতর দিয়েই যে আমরা এক-এক ভাবে অসীমের স্পর্শ নিয়েছি । আমার সেই ঘর-ভরা অসীমকে, আমার সেই জীবন-ভরা অসীমকে, আমার ঘরের ডাক দিয়েই ডাকতে হবে— আমার জীবনের ডাক দিয়েই ডাকতে হবে। সেইটেই আমার চরম ডাক, সেইজন্তেই আমার ঘর। সেইজন্যেই আমি মানুষ হয়ে জন্মেছি ; সেইজন্যেই আমার জীবনের যত-কিছু জানা, যত