পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 tv- রবীন্দ্র-রচনাবলী । পারি। যতই কেঁদে মরি-না কেন, যতই বলি-না কেন যে তার সঙ্গে অনেক দিন ধরে আমার সম্বন্ধ— তাকে রাখতে পারব না, কারণ তাকে রক্ষা মানেই মৃত্যুকে ধরে রাখা। আমাদের যে দেহকে ত্যাগ করে মৃত্যুকেই মারতে হয়। তেমনি বাপ-পিতামহ থেকে যা চলে আসছে, যা জমে রয়েছে, তাকে চিরকাল ধরে রাখবার ইচ্ছাও মৃত্যুকে ধরে রাখবার ইচ্ছামাত্র। দেহকে রাখতে পারলুম না, পুরাতনকেও রাখতে পারব नों | ইতিহাসবিধাতা তাই বললেন নতুন হতে হবে। কামানের গর্জনে আজ সেই বাণীই শুনতে পাচ্ছি, নতুন হতে হবে। জাতীয়তার আদর্শকে নিয়ে যুরোপ এতকাল ধরে তার প্রতাপকে অভ্ৰভেদী তরে তুলেছে। ছোটাে জাহাজ ছিল, তার পর বড়ো জাহাজ, তার পর বড়ো জাহাজ থেকে আরও বড়ো জাহাজ । কামান ছোটো ছিল, তা থেকে আরও বড়ো কামান গড়ে তুলে যুরোপ তার মারণ-অস্ত্র সব এতকাল বসে শানিয়েছে। জলে স্থলে এই-সব ব্যাপার করে তুলে তার তৃপ্তি হল না ; আকাশে পর্যস্ত মারবার যন্ত্র তাকে তৈরি করতে হল। নিজের প্রতাপকে এমনি করে অভ্রভেদী করে সে দুর্বলকে টিপে তার রক্ত পান করবে, এমন কথা কি সে বলতে পারে। মানুষ মানুষকে খেয়ে বঁাচবে, এই হবে ? ইতিহাসবিধাতা তাই হতে দেবেন ? না । তিনি কামানের গর্জনের ধ্বনির ভিতর দিয়ে বলেছেন, নতুন হতে হবে। য়ুরোপে নতুন হবার সেই ডাক উঠেছে। সেই আহবান আমাদের মধ্যে নেই ? আমরাই জরাজীর্ণ হয়ে থাকব ? ইতিহাসবিধাতা কি আমাদেরই আশা ত্যাগ করেছেন। দুৰ্গতির পর দুর্গতি, দুঃখের পর দুঃখ দিয়ে তিনি আমাদের দেশকে বলছেন : না হয় নি, তোমাদেরও হয় নি, নতুনকে লাভ অমৃতকে লাভ হয় নি। তুমি যে আবর্জনাস্ত,প জমিয়েছ তা তোমাকে আশ্রয় দিতে পারে নি। আমি অনন্ত প্রাণ, আমায় বিশ্বাস করো। বীর পুত্র, দুঃসাহসিক পুত্ৰ সব, বেরিয়ে পড়ে — এই বাণী কি আসে নি। এ কথা তিনি শোনান नेि ? শৃশ্বস্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রা: আ যে ধামানি দিব্যানি তস্থঃ । - *Aha শোনে, তোমরা অমৃতের পুত্ৰ, তোমরা দিব্যধামবাসী। তোমাদের এই অন্ধ মধ্যে সেই পরপর থেকে আলোক আসছে। সেইখান থেকে যে আলোক আসছে তাতে জাগ্রত হও ; বসে বসে চকমকি ঠুকলে দিনকে স্বষ্টি করতে পারবে না। সেই আলোকে যে নব নব দিন অমৃতের বার্তা নিয়ে আসছে। নব নব লীলায় সব নৃতন