পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন ¢ ډ ه আশ্রম তার সেই দীক্ষাদিনটিরই বাইরের রূপ। কারণ, এখানে কর্মে দীক্ষা, শিক্ষায় দীক্ষা, শিক্ষকতায় দীক্ষা— সেই অমরজীবনের দীক্ষা । সেই পরমদীক্ষার মন্ত্রটি এই আশ্রমের মধ্যে রয়ে গেছে। প্রতিদিন সে কথা যদি ভুলে গিয়ে থাকি অন্তত আজ উৎসবের আনন্দালোকে আশ্রমের সেই অমৃতরূপকে সুস্পষ্ট উপলব্ধি করবার জন্য প্রস্তুত হও । আজ উদবোধিত হও, সত্যকে দেখো । আজ বাতাসের মধ্যে সেই দীক্ষার মন্ত্র শ্রবণ করো— 尊 ঈশাবাস্তমিদং সৰ্বং ষংকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ । তেন ত্যক্তেন ভূঞ্জীথাঃ মা গৃধঃ কস্তস্বিদ্ধনম্। যে পরম ইচ্ছায় সমস্ত জগৎ বিধৃত ও চালিত, যে পরম ইচ্ছায় সূর্য চন্দ্র তারা নিয়মিত এবং আকাশের অনন্ত আরতিদীপের কোনোদিন নির্বাণ নেই, সেই পরম ইচ্ছার দ্বারা সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যে আচ্ছন্ন তা উপলব্ধি করো। সব স্পন্দিত তার ইচ্ছার কম্পনে, র্তার আনন্দের বিদ্যুতে। সেই আনন্দকে দেখো । তিনি ত্যাগ করছেন তাই ভোগ করছি। তিনি ত্যাগ করছেন তাই জীবনের উৎস দশ দিকে প্রবাহিত হচ্ছে ; আনন্দের নদী শাখায় প্রশাখায় বয়ে যাচ্ছে ; ঘরে ঘরে স্বামীস্ট্রীর পবিত্র প্রীতিতে, পিতামাতার গভীর স্নেহে, মাধুর্যধারার অবসান নেই। অজস্র ধারায় সেই জীবন, সেই আনন্দ, সেই প্রেম প্রবাহিত ; ভোগ করো, আনন্দে ভোগ করে । আকাশের নীলিমায়, কাননের খামলিমায়, জ্ঞানে প্রেমে আনন্দে ভোগ করে, পরিপূর্ণরূপে ভোগ করে। মা গৃধ । মনের ভিতরে কোনো কলুষ কোনো লোভ না আমুক, পাপের লোভের সকল বন্ধন মুক্ত হোক। এই তার দীক্ষার মন্ত্র । এই মন্ত্র আশ্রমকে স্বষ্টি করেছে, এই মন্ত্র এই আশ্রমকে রক্ষা করেছে। এই আশ্রমের আকাশে, পুণ্য সমীরণে, নির্মল আলোকে, উদার প্রান্তরে, এই আমাদের সম্মিলিত জীবনের মধ্যে এই মন্ত্রকে দেখবার, শ্রবণ করবার, গ্রহণ করবার জন্য অদ্য এই উৎসব। চিত্ত জাগ্রত হোক, আশ্রমদেবতা প্রত্যক্ষ হোন, তিনি তার মন্দিরের দ্বার উদ্‌ঘাটন করুন। এই ফুলের মতো সুকুমার তরুণজীবনগুলির উপর তার স্নেহশীর্বাদ পড়ুক ; বিকশিত হোক এরা পুণ্যে প্রেমে পবিত্রতায় ; স্মরণ করুক এই শুভদিন, গ্রহণ করুক এই মন্ত্র, এই চিরজীবনের পাথেয়। এদের সম্মুখে সমস্ত জীবনের পথ রয়েছে, অমৃত আশীৰ্বাদ এর গ্রহণ করে যাত্রা করুক ; চিরজীবনের দীক্ষণকে লাভ করে এর অগ্রসর হয়ে যাক। পথের সমস্ত বাধা বিপত্তি সংকটকে অতিক্রম করে যাবার জন্যে এই দীক্ষার মন্ত্র তাদের সহায় হোক। উদবোধিত হও, জীবনকে উদবোধিত করে । ৭ পৌষ ১৩২১