পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&\9O রবীন্দ্র-রচনাবলী আদিত্য। শুভদৃষ্টির আলোতে গাছপালা পাহাড়-পর্বত সমস্তই স্বচ্ছ হয়ে যায়। ও একজাতের একসােরজ আর-কি। নীরজা। মিছে। বকচ্ছ। আসল কথা, তোমার ইচ্ছে নয় বিয়েটা ঘটে। আদিত্য। এতক্ষণে ধরেছি। ঠিক । সরলা গেলে আমার বাগানের দশা কী হবে বলে। লাভলোকসানের কথাটাও ভাবতে হয়। ও কি ও, হঠাৎ তোমার বেদনটা 6द67 উঠল না কি ? নীরজা। (রুক্ষভাবে) কিছু হয় নি। আমার জন্যে তোমাকে তত ব্যস্ত হতে হবে না। আদিত্য ওঠবার উপক্রম করছে। ...আমাদের বিয়ের পরেই ঐ আর্কিড-ঘরের প্রথম পত্তন, ভুলে যাও নি তো সে কথা ? তার পরে দিনে দিনে আমরা দুজনে মিলে ঐ ঘরটাকে সাজিয়ে তুলেছি। ওটাকে নষ্ট করতে দিতে তোমার মনে একটুও লাগে না ? আদিত্য। (বিস্মিতভাবে) সে কেমন কথা ? নষ্ট হতে দেবার শখ আমার দেখলে কোথায় ? নীরজা। (উত্তেজিত হয়ে) সরলা কী জানে ফুলের বাগানের ? আদিত্য। বলো কী? সরলা জানে না? যে-মেসোেমশায়ের ঘরে আমি মানুষ তিনি যে সরলার জ্যাঠামশায়! তুমি তো জানো তঁরি বাগানে আমার হাতে-খড়ি। জ্যাঠামশায় বলতেন ফুলের বাগানের কাজ মেয়েদেরই, আর গোরু দোওয়ানো। তার সব কাজে ও ছিল তার সঙ্গিনী। নীরজা। আর তুমি ছিলে সঙ্গী। আদিত্য। ছিলেম বৈকি। কিন্তু আমাকে করতে হত কলেজের পড়া, ওর মতো অতি সময় দিতে পারি নি। ওকে মেসোমশায় নিজে পড়াতেন। নীরজা। সেই বাগান নিয়ে তোমার মেসোেমশায়ের সর্বনাশ হয়ে গেল, এমনি ও মেয়ের পয়! আমার তো তাই ভয় করে। অলক্ষুণে মেয়ে। দেখো-না মাঠের মতো কপাল, ঘোড়ার মতো লাফিয়ে চলন। মেয়েমানুষের পুরুষালি বুদ্ধিটা ভালো নয়। ওতে অকল্যাণ ঘটায়। আদিত্য। তোমার আজ কী হয়েছে বলে তো নীরু ? কী কথা বলছ ? মেসোমশায় বাগান নিজের লোকসান করতেও তার সমকক্ষ কেহ ছিল না। সকলের কাছে তিনি নাম পেতেন, দাম পেতেন না। বাগান করবার জন্যে আমাকে যখন মূলধনের টাকা দিয়েছিলেন আমি কি জ্ঞানতুম তখনি তীর তহবিল ডুবুডুবু। আমার একমাত্র সান্তনা এই যে, তঁর মরবার আগেই সমস্ত দিয়েছি শোধ করে। সরলা কমললেবুর রস নিয়ে এল নীরজা। (সরলাকে) ঐখানে রেখে যাও। ८t! न ८ tनि (আদিত্যকে) সরলাকে তুমি বিয়ে করলে না কেন? আদিত্য। শোনো একবার কথা! বিয়ের কথা কোনোদিন মনেও আসে নি। নীরজা। মনেও আসে নি? এই বুঝি তোমার কবিত্ব!