পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ob" রবীন্দ্র-রচনাবলী\א ভরে উঠেছে। তেইশ বছর যা ছিল কুঁড়িতে, আজ দৈবের কৃপায় তা ফুটে উঠেছে। আমি বলছি, তাকে চাপা দিতে গেলে সে হবে ভীরুতা, সে হবে অধৰ্ম। সরলা। চুপ, চুপ, আর বোলো না। আজকের রাত্তিরের মতো মাপ করো, মাপ করে। আদিত্য। সরি, আমিই কৃপাপাত্ৰ, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। আমিই তোমার ক্ষমার যোগ্য। কেন আমি ছিলুম। অন্ধ? কেন আমি তোমাকে চিনলুম না, কেন বিয়ে করতে গেলুম ভুল করে % তুমি তো কর নি, কত পােত্র এসেছিল তোমাকে কামনা করে সে তো আমি জানি। সরলা। জ্যাঠামশায় যে আমাকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন তাঁর বাগানের কাজে, নইলে 28(\l- আদিত্য। না না- তোমার মনের গভীরে ছিল তোমার সত্য উজ্জ্বল। না জেনেও তার কাছে তুমি বঁধা রেখেছিলো নিজেকে। আমাকে কেন তুমি চেতন করে দাও নি ? আমাদের পথ কেন श्न उष्मानाप्री? সরলা। থাক থােক, যাকে মেনে নিতেই হবে তাকে না মানবার জন্য ঝগড়া করছ কার সঙ্গে ? কী হবে মিথ্যে ছটফট করে ? কাল দিনের বেলায় যা হয় একটা উপায় স্থির করা যাবে। আদিত্য। আচ্ছা চুপ করলুম। কিন্তু এমন জ্যোৎস্নারাত্রে আমার হয়ে কথা কইবে এমন কিছু রেখে যাব তোমার কাছে। কোমরে-বাঁধা বুলি থেকে বের করলে পাঁচটি নাগেশ্বর ফুলের একটি ছোটাে তোড়া আমি জানি নাগকেশর তুমি ভালোবাস। তোমার কঁধের ঐ আঁচলের উপর পরিয়ে দেব? এই এনেছি সেফটিপিন । সরলা আপত্তি করলে না। আদিত্য বেশ একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে যথাস্থানে তোড়াটি পরিয়ে দিলে। সরলা উঠে দাঁড়াল, আদিত্য সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত ধরে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কী আশ্চর্য তুমি সরি, কী আশ্চর্য! সরলা হাত ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে চলে গেল। আদিত অনুসরণ করলে না। যতক্ষণ দেখা যায় চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখলে। তার পরে বসে পড়ল সেই ঘাটের বেদীর পরে } চাকর ৷ খাবার এসেছে। আদিত্য। আজ আমি খাব না। নীরজার ঘর। ঘরের সব আলো নোেবালো। জািনলা খোলা। জ্যোৎস্না পড়েছে বিছানায়, পড়েছে। নীরঞ্জার মুখে, আর শিয়ারের কাছে আদিতোর দেওয়া সেই ল্যাবার্নােম গুচ্ছের উপর। বাকি সমস্ত অস্পষ্ট। বালিশে হেলান দিয়ে নীরজা অর্ধেক উঠে বসে আছে, চেয়ে আছে জানালার বাইরে। সেদিকে অর্কিড়ের ঘর পেরিয়ে দেখা যাচ্ছে সুপুরিগাছের সার। এইমাত্র হাওয়া জেগেছে, দুলে উঠছে পাতাগুলো। মেঝের উপর পড়ে আছে। থালায় বরফি আর কিছু আবির। দরজার কাছ থেকে রমেন জিজ্ঞাসা করল