পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মালঞ্চ SSS রমেন। বউদি, ডেকেছ কি ? . ' . নীরজা। (রুদ্ধ গলা পরিষ্কার করে) এসো। : পমেন মোড়া টেনে এনে বসল বিছানার পাশে। নীরজা অনেকক্ষণ কোনো কথা বললে না। তার ঠোঁট কপতে লাগল। গ্লেন বেদনার ঝড় পাক খেয়ে উঠছে। কিছু পরে সামলে নিলে, ল্যাবার্নােম গুচ্ছের দুটাে খসে-পড়া ফুল দলিত হয়ে গেল তার মুঠোর মধ্যে। তার পরে কোনো কথা না বলে একখানা চিঠি দিলে রমেনের হাতে। রমেন পত্ৰখনি পড়তে

  • TናíG¶– r ,

“এতদিনের পরিচয়ের পরে আজ হঠাৎ দেখা গেল আমার নিষ্ঠায় সন্দেহ করা সম্ভবপর হল তোমার পক্ষে। এ নিয়ে যুক্তিতর্ক করতে লজ্জা বোধ করি। তোমার মনের বর্তমান অবস্থায় আমার সকল কথা সকল কাজই বিপরীত হবে তোমার অনুভবে। সেই অকারণ পীড়ন তোমার দুর্বল শরীরকে আঘাত করবে। প্রতি মুহুর্তে। আমার পক্ষে দূরে থাকাই ভালো যে পর্যন্ত না তোমার মন সুস্থ হয়। এও বুঝলুম সরলাকে এখানকার কাজ থেকে বিদায় করে দিই এই তোমার ইচ্ছা! হয়তো দিতে হবে। ভেবে দেখলুম তা ছাড়া আর অন্য পথ নেই। তবু বলে রাখি আমার শিক্ষা দীক্ষা উন্নতি সমস্তই সরলার জ্যাঠামশায়ের প্রসাদে ! আমার জীবনে সার্থকতার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন তিনিই। তারই স্নেহের ধন সরলা সর্বস্বাস্ত নিঃসহায়। আজ ওকে যদি ভাসিয়ে দিই তো আধর্ম হবে। তোমার প্রতি ভালোবাসার খাতিরেও পারব না। অনেক ভেবে স্থির করেছি, আমাদের ব্যবসায়ে নতুন বিভাগ একটা খুলব, ফুল-সবজির বীজ তৈরির বিভাগ। মানিকতলায় বাড়ি সুদ্ধ জমি পাওয়া যেতে পারবে। সেইখানেই সরলাকে বসিয়ে দেব কাজে । এই কাজ আরম্ভ করবার মতো নগদ টাকা হাতে নেই। আমার । আমাদের এই বাগানবাড়ি বন্ধক রেখে টাকা তুলতে হবে। এ প্রস্তাবে রাগ কোরো না। এই আমার একান্ত অনুরোধ। মনে রেখো, সরলার জ্যাঠামশায় আমার এই বাগানের জন্যে আমাকে মূলধন বিনা সুদে ধার দিয়েছিলেন, শুনেছি তারও কিছু অংশ তীকে ধার করতে হয়েছিল। শুধু তাই নয়, কাজ শুরু করে দেবার মতো বীজ, কলমের গাছ, দুর্লভ ফুলের চারা, অর্কিড, ঘাসকাটা কল ও অন্যান্য অনেক যন্ত্র দান করেছেন বিনামূল্যে। এত বড়ো সুযোগ যদি আমাকে না দিতেন। আজ ত্ৰিশ টাকা বাড়ি ভাড়ায় কেরানিগিরি করতে হত, তোমার সঙ্গে বিবাহ ঘটত না কপালে। তোমার সঙ্গে কথা হবার পর এই প্রশ্নই বার বার মনে আমার হয়েছে, আমিই ওকে আশ্রয় দিয়েছি, না, আমাকেই আশ্রয় দিয়েছে সরলা। এই সহজ কথাটাই ভুলে ছিলুম, তুমিই আমাকে দিলে মনে করিয়ে। এখন তোমাকেও মনে রাখতে হবে। কখনো ভেবো না। সরলা আমার গলগ্রহ। ওদের ঋণ শোধ করতে পারব না কোনোদিন, ওর দাবিরও অন্ত থাকবে না। আমার পরে। তোমার সঙ্গে কখনো যাতে ওর দেখা না হয় সে চেষ্টা রইল মনে । কিন্তু আমার সঙ্গে ওর। সম্বন্ধ যে বিচ্ছিন্ন হবার নয়। সে কথা আজ যেমন বুঝেছি। এমন এর আগে কখনো বুঝি নি। সব কথা বলতে পারলুম না, আমার দুঃখ আজ কথার অতীত হয়ে গেছে। যদি অনুমানে বুঝতে পার তো পারলে, নইলে জীবনে এই প্রথম আমার বেদনা, যা রইল তোমার কাছে অব্যক্ত ।” চিঠি পড়া শেষ হলে রমেন চুপ করে রইল। নীরজা। (ব্যাকুলভাবে) কিছু একটা বলো ঠাকুরপো। বমেন নিরুত্তর ; নীরজা তখন বিছানার উপর লুটিয়ে পড়ে বালিশে মাথা ঠুকতে তুকতে বললে অন্যায় করেছি, আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু কেউ কি তোমরা বুঝতে পার না কিসে আমার মাথা দিল খারাপ করে ?