পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা শব্দতত্ত্ব । Sea প্ৰায়শ্চিত্ত করিয়া সাধারণের জাতে উঠিতে হইয়াছে। এমন-কি বর্তমান ইংরেজি সাহিত্যেও সাধারণের পথে সাহিত্যের এই অভিসার দেখিতে পাই। বার্নার্ড শ, ওয়েলস, বেনেন্টু, চেস্টারটন, বেলক প্রভৃতি আধুনিক লেখকগুলি হালকা চালের ভাষায় লিখিতেছেন। ; আমাদের সাহিত্য যে-ভাষাবিশিষ্টতার দুর্গে আশ্রয় লইয়াছে সেখান হইতে তাহাকে লোকালয়ের ভাষার মধ্যে নামাইয়া আনিবার জন্য সবুজ পত্র’-সম্পাদক কোমর বাঁধিয়াছেন। তঁর মত এই যে, সাহিত্য পদার্থটি আকারে সাধারণ এবং প্রকারে বিশিষ্ট- এই হইলেই সত্য হয়। এ কথা মানি । কিন্তু হিন্দুস্থানীতে একটা কথা আছে ‘পিয়লা সামালনা মুশকিল হ্যায়”। স্বয়ং বিধাতাও মানুষ গড়িবার গােড়ায় বানর গড়িয়াছেন, এখনো তীর সেই আদিম সৃষ্টির অভ্যাস লোকালয়ে সদাসর্বদা। দেখিতে পাওয়া যায়। শান্তিনিকেতন 5 Yes & বাংলা ভাষাতত্ত্ব যিনি আলোচনা করিতে চান, বীমস সাহেবের তুলনামূলক ব্যাকরণ এবং হর্নলে সাহেবের গৌড়ীয় ভাষার ব্যাকরণ তঁহার পথ অনেকটা প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছে। তাঁহাদের গ্রন্থ হইতে দুটাে-একটা ভুল-ত্রুটি বা স্বলন বাহির করা গৌড়ী-ভাষীদের পক্ষে অসম্ভব না হইতে পারে। কিন্তু যথােচিত শ্রদ্ধা ভক্তি ও নম্রতার সহিত তাহাদিগকে গুরু বলিয়া স্বীকার না করিয়া সংসারে জড়পদার্থের রহস্য যথেষ্ট জটিল এবং দুৰ্গম, কিন্তু সজীব পদার্থের রহস্য একান্ত দুরূহ। ভাষা একটা প্রকাণ্ড সজীব পদার্থ। জীবনধর্মের নিগুঢ় নিয়মে তাহার বিচিত্র শ্বখাপ্রশাখা কত দিকে কতপ্রকার অভাবনীয় আকার ধারণ করিয়া ব্যাপ্ত হইতে থাকে তাহার অনুসরণ করিয়া উঠা অত্যন্ত কঠিন। বীমস সাহেব, হর্নােল সাহেব, হিন্দি ব্যাকরণকার কেলগ সাহেব, মৈথিলী ৷ ভাষাতত্ত্ববিৎ গ্রিয়ার্সন সাহেব বিদেশী হইয়া ভারতবর্ষ-প্রচলিত আর্য ভাষার পথলুপ্ত অপরিচিত জটিল মহারণ্যতলে প্রবেশপূর্বক আশ্রান্ত পরিশ্রম এবং প্রতিভার বলে যে-সকল প্রচ্ছন্ন তথ্য উদ্ধার করিয়াছেন, তাহা লাভ করিয়া এবং বিশেষত তঁহদেৱ আশ্চর্য অধ্যবসায় ও সন্ধানপরতার দৃষ্টান্ত দেখিয়া আমাদের স্বদেশী ভাবার সহিত সম্পর্কশূন্য স্বদেশহিতৈষী-আখ্যাধরীদের লজ্জা ও প্রাকৃত ভাষার সহিত বাংলার জন্মগত যোগ আছে সে-সম্বন্ধে দীনেশচন্দ্ৰবাবু ডাক্তার বিভক্ত ছিল। শৌরসেনী ও মাগধী। মহারাষ্ট্ৰী লিখিত ভাষা ছিল মাত্র এবং প্রাকৃত ভাষা ভারতবৰীয় অনার্যদের মুখে বিকৃতিপ্রাপ্ত হইয়া যে-ভাষায় পরিণত হইয়াছিল তাহার নাম ছিল পৈশাচী। প্রাটীন ব্যাকরণকারগণ যে-সকল ভাষাকে অপভ্রংশ ভাবা বলিতেন তাহদের নাম এই ; আভীৱী (সিন্ধি, মাড়োয়ারি), আকন্ঠী (পূর্ব রাজপুতানি), গীেৰ্জরী (গুজরাটি), বাহুিকা (পাঞ্জাবি), SVS8