পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা শব্দতত্ত্ব ©ዒእ প্রাকৃত ব্যাকরণকারগণ নিম্নলিখিত ভাষাগুলিকে মাগধী প্রাকৃতের শাখারূপে বর্ণনা করিয়াছেন— মাগধী, অর্ধমাগধী, দক্ষিণাত্যা, উৎকালী এবং শাবরী। বেহার এবং বাংলার ভাষাকে মাগধীরূপে গণ্য করা যায়। মাগধীর সহিত শৌরসেনী বা মহারাষ্ট্ৰী মিশ্রিত হইয়া অর্ধমাগধীরূপ ধারণ করিয়াছে- ইহা যে মগধের পশ্চিমের ভাষা অর্থাৎ ভোজপুরী তাঁহাতে সন্দেহ নাই। 'বিদৰ্ভ অর্থাৎ বেরার ও তাহার নিকটবর্তী প্রদেশের ভাষা দক্ষিণাত্যা নামে অভিহিত। অতএব ইহাই বর্তমান মরাঠীস্থানীয়। উৎকালী উড়িষ্যার ভাষা, এবং এক দিকে দক্ষিণাত্যা ও অন্য দিকে মাগধী ও উৎকালীর মাঝখানে শাবরী। । দেখা যাইতেছে, প্রাচ্য হিন্দি, মৈথিলী, উড়িয়া, মহারাষ্ট্রী এবং আসামি এইগুলিই বাংলার স্বজাতীয় ভাষা। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, কফিরিস্থানের কফিরি ভাষা এবং আফগানিস্থানের পুশতু মাগধী প্রাকৃতের লক্ষণােক্রান্ত, এবং সে হিসাবে বাংলার কুটুম্বশ্রেণীয়। শৌরসেনী প্রাকৃত মাঝে পড়িয়া মাগধী প্রাকৃতের বিস্তারকে খন্তীকৃত করিয়া দিয়াছে। । *,, এক্ষণে বাংলার ভাষাতত্ত্ব প্রকৃতরূপে নিরূপণ করিতে হইলে প্রাকৃত, পালি, প্রাচ্য হিন্দি, মৈথিলী, আসামি, উড়িয়া এবং মহারাষ্ট্ৰী ব্যাকরণ পর্যালোচনা ও তুলনা করিতে হয়। ] কথাটা শুনিতে কঠিন, কিন্তু বাংলার ভাষাতত্ত্ব নির্ণয় জীবনের একটা প্রধান আলোচ্য বিষয়রাপে গণ্য করিয়া লইলে এবং প্রত্যহ অন্তত দুই-এক ঘণ্টা নিয়মিত কাজ করিয়া গেলে এ কার্য একজনের পক্ষে অসাধ্য হয় না। বিশেষত উক্ত ভাষাকল্পটির তুলনামূলক এবং স্বতন্ত্র ব্যাকরণ অনেকগুলিই পাওয়া যায়। এবং এইরূপ সম্পূর্ণ একাগ্রতা ও অধ্যবসায়ের গুটিকতক দৃষ্টান্ত না থাকিলে আমাদের বঙ্গসাহিত্য যথোচিত গৌরব লাভ করিতে পরিবে না। বাংলার ভাষাতত্ত্ব-সন্ধানের একটি ব্যাঘাত, প্রাচীন পুথির দুস্তপ্রাপ্যতা। কবিকঙ্কণচণ্ডী, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি প্রাচীন কাব্যগুলি জনসাধারণের সমাদৃত হওয়াতে কালে কালে অল্পে অল্পে পরিবর্তিত ও সংশোধিত হইয়া আসিয়াছে। প্রাচীন আদর্শ পুথি কোনো এক পুতকালয়ে যথাসম্ভব সংগৃহীত থাকিলে অনুসন্ধিৎসুর পক্ষে সুবিধায় বিষয় হয়। সাহিত্য-পরিষদের অধিকারে এইরূপ একটি পুস্তকালয় স্থাপিত হইতে পরিবে ইহাই আমরা আশা করি।... . . Ayu yebo বাংলা ব্যাকরণের তির্যকরূপ । মারাঠি হিন্দি প্রভৃতি অধিকাংশ গৌড়ীয় ভাষায় শব্দকে আড় করিয়া বলিবার একটা প্ৰথা আছে। যেমন হিন্দিতে 'কুত্তা’ সহজরুরূপ, কুক্তে’ বিকৃতরূপ। ‘ঘোড়া’ সহজরীপ, “ঘোড়ে' বিকৃতরূপ। মারাঠিতে ঘর ও ঘরা, বাপ ও বাপা, জিভ ও জিভে ইহার দৃষ্টান্ত। - এই বিকৃতরূপকে ইংরেজি পরিভাষিকে oblique form বলা হয়; আমরা তাহাকে তির্যকরূপ নাম দিব। " অন্যান্য গৌড়ীয় ভাষার ন্যায় বাংলা ভাষাতেও তির্যকরূপের দৃষ্টান্ত আছে। যেমন বাপা, ভায়া (ভাইয়া), চাদা, লেজা, ছাগলী, পাগলা, গোরা, কালা, আমা, তোমা, কাগাবগা (কাকােবক), বাদলা, বামনা, কোণা ইত্যাদি।