পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VORM রবীন্দ্র-রচনাবলী ইংরেজি ব্যাকরণে এইরূপ নির্দেশক চিহ্নকে Article বলে। বাংলাতেও এই শ্রেণীর সংকেত আছে। সেই সংকেতের দ্বারা সামান্য বিশেষ্যপদ একবচন ও বহুবচন রূপ ধারণা করিয়া বিশেষ বিশেষ্যে পরিণত হয়। এই কথা মনে রাখা কর্তব্য, বিশেষ্যপদ, একবচন বা বহুবচন রূপ গ্ৰহণ করিলেই, সামান্যতা পরিহার করে।" একটি ঘোড়া বা তিনটি ঘোড়া বলিলেই ঘোড়া শব্দের জাতিবাচক অর্থ সংকীর্ণ হইয়া আসে- তখন বিশেষ এক বা একাধিক ঘোড়া বোঝায়-সুতরাং তখন তাহাকে সামান্য বিশেষ্য না বলিয়া বিশেষ বিশেষ্য বলাই উচিত। এই কথা চিন্তা করিলেই পাঠক বুঝিতে পরিবেন আমাদের সামান্য বিশেষ্য এবং ইংরেজি Common name এক নহে। মোটামুটি বলা যাইতে পারে বাংলার নির্দেশক চিহ্নগুলির শব্দের পূর্বে না বসিয়া শব্দের পরেই যোজিত হয়। ইংরেজিতে “the room'- tertist “ঘরটি”। এখানে ‘টি’ নির্দেশক চিহ্ন। g fe e G . ইংরেজিতে the আর্টিকল একবচন এবং বহুবচন উভয়ত্রই বসে। কিন্তু বাংলায় টি ও টা সংকেতের দ্বারা একটিমাত্র পদার্থকে বিশিষ্ট করা হয়। যখন বলা হয়, রাস্তা কোন দিকে তখন সাধারণভাবে পথ সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হয়- যখন বলি, রাস্তােটা কোন দিকে — তখন বিশেষ একটা রাস্তা কোন দিকে সেই সম্বন্ধেই প্রশ্ন করা হয়। •;ነ ইংরেজিতে 'the' শব্দের প্রয়োগ যত ব্যাপক বাংলায় ‘টি’ তেমন নহে। আমাদের ভাষায় এই প্রয়োগ সম্বন্ধে মিতব্যয়িতা আছে। সেইজন্যে যখন সাধারণভাবে আমরা খবর দিতে চাই, মধু বাহিরে নাই, তখন আমরা শুধু বলি, মধু ঘরে আছে- ঘর শব্দের সঙ্গে কোনো নির্দেশক চিহ্ন যোজনা করি না। কারণ ঘরটাকেই বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করিবার কোনোই প্রয়োজন নাই। ইংরেজিতে এ স্থলেও ‘the room' <!ott হইয়া থাকে। কিন্তু যখন কোনো একটি বিশেষ ঘরে भ{ আছে এই সংবাদটি দিবার প্রয়ােজন ঘটে তখন আমরা বলি, ঘরটাতে মধু আছে। এইরূপ, যে বাক্যে একাধিক বিশেষ্যপদ আছে তাহদের মধ্যে বক্তা যেটিকে বিশেষভাবে নির্দেশ করিতে চান সেইটির সঙ্গেই নির্দেশক যোজনা করেন। যেমন, গোরুটা মাঠে চরছে, বা মাঠটিাতে গোরু চরছে। জাজিমটা ঘরে পাতা, বা ঘরটাতে জাজিম পাতা। আমার মন খারাপ হয়ে গেছে” বা “আমার মনটা খারাপ হয়ে গেছে।-দুইই আমরা বলি। প্রথম বাক্যে, মন খারাপ হওয়া ব্যাপারটাই বলা হইতেছে- দ্বিতীয় বাক্যে, আমার মনই যে খারাপ হইয়া গিয়াছে তাহার উপরেই ক্টোক । ‘টি’ সংকেতটি ছোটো আয়তনের জিনিস ও আদরের জিনিস সম্বন্ধে এবং টা’ বড়ো জিনিস সম্বন্ধে বা অবজ্ঞা কিংবা অপ্রিয়তা বুঝাইবার স্থলে বসে। যে পদার্থ সম্বন্ধে আদর বা অনাদর কিছুই বােঝায় না, তৎসম্বন্ধেও টাি’ প্রয়ােগ হয়। ছাতাটি কোথায় এই বাক্যে ছাতার প্রতি বক্তার একটু যত্ন প্রকাশ হয়, কিন্তু ছাতাটা কোথায়' বলিলে যত্ন বা অযত্ন কিছুই বোঝায় না। : সাধারণত নামসংজ্ঞার সহিত “টা’, ‘টি’ বসে না। কিন্তু বিশেষ কারণে ঝোক দিতে হইলে নামসংজ্ঞার সঙ্গেও নির্দেশক বসে। যেমন, হরিটা বাড়ি গেছে। সম্ভবত হরির বাড়ি যাওয়া বক্তার পক্ষে গ্ৰীতিকর হয় নাই, টা তাহাই বুঝাইল । রামটি মারা গেছে, এখানে বিশেষভাবে করুণা প্রকাশের জন্য টি বসিল। এইরূপ শ্যামটা ভারি দু শৈলটি ভারি ভালো মেয়ে। এইরূপে টি ও টা অনেক স্থলে বিশেষ পদের সঙ্গে বক্তার হৃদয়ের সুর মিশাইয়া দেয়। বলা আবশ্যক মান্য ব্যক্তির নাম সম্বন্ধেও টি বা টা ব্যবহার হয় না। . . . . . . . . . . . " ' "