পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Y N রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী কর্তৃকারক একবচন— রাম হাসে, বাঘে মানুষ খায়, ঘোড়ায় লাথি মারে, গোরুতে ধান খায়। এইখানে একটা কথা পরিষ্কার করা দরকার। “রাম হাসে এই বাক্যে রাম’ শব্দ কর্তৃকারক সন্দেহ নাই। কিন্তু “বাঘে মানুষ খায়’, ‘ঘোড়ায় লাথি মারে’, ‘গোরুতে ধান খায়’, বাক্যে “বাঘে ‘ঘোড়ায়’ ‘গােরুতে’ শব্দগুলি কর্তৃকারক এবং করণকারকের খিচুড়ি। বাছুরে জন্মায় বা বাছুরে মরে’ এমন বাক্য বৈধ নহে, বাছুরে তাকে চেটেচে’, চালে- অর্থাৎ এরূপ স্থলে কর্তার সঙ্গে কর্ম চাই। ‘ঘোড়ায় লাথি মারে’ বলি কিন্তু ‘ঘোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে বলি না। “লোকে নিন্দে করে' বলি, কিন্তু ‘লোকে জমেচে” না বলিয়া “লোক জমেচে' বলি। আরো একটি কথা বিবেচ্য, বাংলায় কর্তৃকারকের এই প্রকার করণঘেঁষা রূপ কেবল একবচনেই চলে, আমরা বলি না। “লোকগুলোতে নিন্দে করে’। তার কারণ, লোকে, বাঘে, ঘোড়ায় প্রভৃতি প্রয়োগ একবচনও নহে বহুবচনও নহে, ইহাকে সামান্যবচন বলা যাইতে পারে। ইহার প্রকৃত অর্থ, লোকসাধারণ, ব্যাখ্রসাধারণ, ঘোটক সাধারণ। যখন বলা হয় “রামে মারলেও মরব, রাবণে মারলেও মরব’, তখন রাম ও রাবণ” ব্যক্তিবিশেষের অৰ্থত্যাগ করিয়া জাতিবিশেষের অর্থ ধারণ করে। কর্তৃকারক বহুবচন = রাখালেরা চরাচ্চে, গাছগুলি নড়চে, লোকসব চলেচে। কর্ম- ভাত খাই, গাছ কাটি, ছেলেটাকে মারি। এইখানে একটু বক্তব্য আছে। কর্মকারকে সাধারণত প্ৰাণীপদার্থ সম্বন্ধেই 'কে' বিভক্তি প্রয়োগ হয়। কিন্তু তাহার ব্যতিক্রম আছে। যেমন, “এই টেবিলটাকে নড়াতে পারাচি নে?” সন্ন্যাসী লোহাকে সোনা করতে পারে’ ‘জিয়োমেট্রির এই প্ৰৱেমটাকে কায়দা করতে হবে।’ ইত্যাদি। অথচ এই প্ৰৱেম কষো, এই লোহাকে আনো, টেবিলকে তৈরি করো’ এরূপ চলে না। অতএব দেখিতেছি, অপ্ৰাণীবাচক শব্দের উত্তরে টা’ বা "টি" যোগ করিলে কর্মকারক। তদুত্তরে ‘কে’ বিভক্তি হয়, যেমন ‘চৌকিটাকে সোরিয়ে দাও” (‘চৌকিকে সোরিয়ে দাও” হয় না) গাছটাকে কাটো” (“গাছকে কাটো হয় না)। ইহাতে বুঝা যাইতেছে। ‘টি’ বা “টা” যোগ করিলে শব্দবিশেষের অর্থ এমন একটা সুনির্দিষ্টতার জোর পায় যে তাহা যেন কতকটা প্রাণের গৌরব লাভ করে। ‘লোহাকে সেনা করা যায়’, বাক্যে ‘লোহা’ সেইরূপ যেন ব্যক্তিবিশেষের ভােব ধারণা করিয়াছে। করণ- ছড়ি দিয়ে মারে, মাঠ দিয়ে যায়, হাত দিয়ে খায়, ঘোলে দুধের সাধ মেটে না, কথায় চিড়ে ভেজে না, কানে শোনে না। অপাদান-রামের চেয়ে (চাইতে) শ্যাম বড়ো, এ গাছের থেকে ও গাছটা বড়ো, তোমা হােতেই এটা ঘটল, ঘর থেকে বেরোও। সম্বন্ধ-গাছের পাতা, আজকের কথা, সেদিনকার ছেলে। অধিকরণ-নদীতে জল, লতায় ফুল, পকেটে টাকা। বাংলায় কর্তৃকারক ছাড়া অপর কারকে বহুবচনসূচক কোনো চিহ্ন নাই। কর্ত— আমি আমরা, তুমি তােমরা, আপনি আপনারা, সে তারা, তিনি তঁরা, এ এরা, ইনি এঁরা, ও ওরা, উনি, ওঁরা, কে কারা, যে যারা, কি কিসব কোনগুলো, যা যা সব যেগুলো, তা