পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা শব্দতত্ত্ব 8S প্রবাসীর একজন কবিরাজ পাঠক বাংলা কথ্যভাষা’ প্রবন্ধে আমার একটি বাক্য-ত্রুটি নির্দেশ করিয়াছেন। আমি লিখিয়াছিলাম “বাংলায় যে অসংযুক্ত শব্দের পূর্বে স্বরবর্ণ ও পরে ব্যঞ্জনবর্ণ আছে সে শব্দ নিজের অকার বর্জন করে।” এই বাক্যে অনেকগুলি অদ্ভুত ভুল রহিয়া গিয়াছে। কবিরাজ মহাশয়ের নির্দেশমতো আমি তাহা সংশোধন করিলাম- “বাংলায় তিন অক্ষরের শব্দের অন্ত অক্ষরের সহিত যদি স্বর থাকে। তবে মধ্যবর্তী বর্ণের আকার বর্জিত হয়, যেমন, পাগলা গরমি দৃষ্টান্ত দেখাইয়াছেন। অগ্রহায়ণের শান্তিনিকেতন পত্রে আমরাও এরূপ দৃষ্টান্ত কয়েকটি দিয়াছি। কবিরাজ মহাশয় বলেন যে, যদিচ আমরা বলি না, “লোকগুলাতে নিন্দা করে” কিন্তু “সব লোকে নিন্দা করে” বলা চলে। অতএব কর্তৃকারকে একার প্রয়োগ কেবল এক-বচনেই চলে এমন কথা জোর দিয়া বলা ঠিক নয়। কর্মকারকে অপ্ৰাণীবাচক শব্দের উত্তর সাধারণত “কে” চিহ্ন বসে না, কিন্তু পরে টা’ বা ‘টি’ থাকিলে বসে, আমি এই নিয়মের উল্লেখ করিয়াছিলাম। কিন্তু আমার ভাষাপ্রয়োগের দোষে কবিরাজ মহাশয় মনে করিয়াছেন যে আমার মতে টা’, ‘টি’ বিশিষ্ট শব্দ কর্মকারকে নির্বিশেষে “কে” চিহ্ন গ্রহণ করে। এইজন্য তিনি কয়েকটি বিরুদ্ধ দৃষ্টান্ত দেখাইয়াছেন যথা, “আগুনের তেজটা দেখ” “তরকারিটা খাওয়া গেল না” ইত্যাদি। কবিরাজ মহাশয় আমার বাক্যরচনায় যে শৈথিল্য নির্দেশ করিয়াছেন আমি কৃতজ্ঞতার সহিত সেই ত্রুটি স্বীকার করিতেছি। কয়েকটি প্রতিশব্দ সম্বন্ধে তিনি যাহা বলেন তাহা চিন্তার যোগ্য। “যে রোগ পিতামাতা হইতে পুত্রপৌত্রে যায়।” তাহাকে আয়ুর্বোেদ সঞ্চারিরোগ’ বলে। Heredity কুলসঞ্চারিতা, inherited কুলসঞ্চারী বলিলে হয় না? আয়ুর্বেদে নাছােড়বান্দার একটি ঠিক সংস্কৃত প্রতিশব্দ আছে— পৌষ ১৩২৬ চলতি ভাষার রূপ নানা জেলায় ভাষার নানা রূপ। এক জেলার ভিন্ন অংশেও ভাষার বৈচিত্ৰ্য আছে। এমন অবস্থায় কোথাকার ভাষা সাহিত্যে প্রবেশ লাভ করবে তা কোনো কৃত্রিম শাসনে স্থির হয় না, স্বতই সে আপনার স্থান আপনি করে। কলকাতা সমগ্র বাংলার রাজধানী। এখানে নানা উপলক্ষে সকল জেলার লোকের সমাবেশ ঘটে আসচে। তাই কলকাতার ভাষা কোনাে বিশেষ জেলার নয়। স্বভাবতই এই অঞ্চলের ভাষাই সাহিত্য দখল করে বসেচে। যেটাকে লেখ্য ভাষা বলি সেটা কৃত্রিম, তাতে প্রাণপদার্থের অভাব, তার চলৎশক্তি আড়ষ্ট, সে বদ্ধ জলের মতো, সে ধারা জল নয়। তাতে কাজ চলে বটে। কিন্তু সাহিত্য শুধু কাজ চলাবার জন্যে নয়, তাতে মন আপনার বিচিত্র লীলার বাহন চায়। এই লীলাবৈচিত্ৰ্য বাঁধা ভাষায় সম্ভব হয় না। এইজন্যেই কলকাতা অঞ্চলের চলতি ভাষাই সাহিত্যের আশ্রয় হয়ে উঠেচে। একদা যখন সাধু ভাষার একাধিপত্য ছিল তখনো যে-কোনো জেলার লেখক নাটক প্রভৃতিতে কলকাতার কথাবার্তা ব্যবহার করেচেন, কখনোই পূর্ব في ج أي لا