পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 RV রবীন্দ্র-রচনাবলী এইজন্য সংস্কৃতের কুতঘাটায় যাহারা ফাঁকি দেয় তাহাদের প্রতি দণ্ডবিধি কঠোর করিলে খেয়া একেবারে বন্ধ করিতে হয়। এটা আমি নিজের প্রাণের ভয়ে বলিলাম বটে কিন্তু সাহিত্যের প্রতি মমতা রাখি বলিয়াও বলিতে হইল। চিঠিখানা বড়ো হইয়া গেল, সুতরাং ইহার মধ্যে পাণিনিপীড়ন নিশ্চয়ই ঘটিয়াছে—আর অপরাধ বাড়াইবার স্থান নাই। অতএব যদি ক্ষমা করেন, তবে বিলাতি কায়দায় আপনার পাণি-নিপীড়ন করিয়া বিদায় গ্রহণ করি।” “ So Ke S Sobr 8 ...আমার চিঠিতে ইংরেজিটাকেও যে বাংলার সঙ্গে জড়াইয়াছি তাহা ভাষা বা ব্যাকরণের দিক হইতে নহে। আমাদের ভাষায় গদ্য সাহিত্যের কোনো একটা পুরাতন আদর্শ নাই। কাদম্বর বাসবদত্তার আদর্শ আমাদের কাজে লাগে না। রামমোহন রায় হইতে আরম্ভ করিয়া আজ পর্যন্ত যে-কেহ বাংলা গদ্য সাহিত্য গড়িয়া তুলিবার কাজে লাগিয়াছেন সকলেই ইংরেজিশিক্ষিত। ইংরেজি যাহারা একেবারেই জানেন না। তঁহারা কেহ কেহ বাংলা ভাযায় সংস্কৃত দর্শন পুরাণ প্রভৃতি আলোচনা করিয়াছেন অন্য দিকে তাঁহাদের কলম খেলে নাই। নৈনিতাল আলু বাংলাদেশের ক্ষেতেও প্রচুর উৎপন্ন হয়। কিন্তু প্রতি বৎসরে তাহার বীজ নৈনিতাল হইতে আনাইতে হয়— হয়তো ক্রমে একদিন এখানকার ক্ষেত্ৰ হইতে উৎপন্ন বীজে কাজ চলিবে। দেখা যাইতেছে ইংরেজির সম্বন্ধেও আমাদের সেই দশা। ইংরেজি সাহিত্যের বীজ বাংলা সাহিত্যে বেশ প্রচুর পরিমাণে ফলিতেছে- তাহাতে আমাদের এ দেশী মাছের ঝোল প্রভৃতিও দিব্য রাঁধা চলিতেছে কিন্তু বীজের আমদানি আজও সেইখান হইতেই হয়। ক্রমে তাহার তেমন প্রয়োজন হইবে না বলিয়া মনে হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত দেখা যাইতেছে। যাহারা বাংলায় ভালো লেখেন তাহারা ইংরেজি জানেন। এই ইংরেজি জানার সঙ্গে বাংলা লেখার যে সম্বন্ধ দেখা যাইতেছে সেটাকে কাকতালীয় ন্যায়ের দৃষ্টান্ত বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া যায় না। বরঞ্চ দেখা গিয়াছে সংস্কৃত জানা নাই বা অল্পই জানা আছে এমন লোক বাংলা সাহিত্যে নাম করিয়াছেন। কিন্তু ইংরেজি জানা নাই এমন লোকের নাম তো মনে পড়ে না। সেইজন্য বলিতেছি বাংলা সাহিত্যে যিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করিতে ইচ্ছা করেন ইংরেজি শিক্ষার পাথেয় সংগ্ৰহ করিতে না পারিলে তিনি অধিকদূর অগ্রসর হইতে পারিকেন না-ঘাটতলা ছাড়াইয়া আরো কিছুদিন যাইতে পারেন। কিন্তু খুব বেশি দূর নহে। আমার এই কথাটা শুনিতে কটু এবং বলিতেও যে রসনা রসসিক্ত হইয়া উঠে তাহা নহে। কিন্তু ভােব এবং ছাদ এ দুটো আমরা অনেকটা ইংরেজি সাহিত্য হইতে সংগ্ৰহ করি।--সকল ক্ষেত্রে চুরি করি বা নকল করি, তাহা নহে- ইংরেজি শিক্ষার সাহায্য না পাইলে সে ভাব সে ছাদ আমাদের সাহিত্যের মন হইতে উৎপন্ন হইত না- আমাদের সাহিত্যের ধরন ধারণ ভাবগতিক অন্য প্রকার হইত। কিন্তু যে কারণেই হউক, যে উপায়েই হউক এখন যে হাঁদটা দাঁড়াইয়া গিয়াছে তাহাকে একেবারে ঠেলিয়া দেওয়া চলিবে না। ইচ্ছা করিলেও কেহ পরিবে না। মৃত্যুঞ্জয় শর্ম ১ ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত পত্ৰ