পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Վ98 রবীন্দ্র-রচনাবলী কিছুদিন পূর্বে ইংরেজি বানান সংস্কার সম্বন্ধে গিলবার্ট মারের একটি পত্র কাগজে প্রকাশিত তার বানান সংস্কার ঘটেছে। সচল ভাষার অচল বানান অস্বাভাবিক। আধুনিক ইংরেজিতে আরএকবার বানান শোধনের প্রয়োজন হয়েছে এই তঁর মত। এই উদ্দেশ্য নিয়ে তঁরা একটি সভাও স্থাপন করেন। ঠিক যে সময়ে বাংলা ভাষায় এই রকম চেষ্টার প্রবর্তন সেই সময়েই গিলবার্ট মারের এই চিঠিখনি পড়ে আমাকে ভাবিয়ে দিয়েছে। বস্তুত ভাবনা অনেক দিন থেকেই আমাকে পেয়ে বসেছিল, এই চিঠিতে আরো যেন একটু ধাক্কা দিল। - সুদীর্ঘকালের সাহিত্যিক ব্যবহারে ইংরেজি ভাষা পাকা হয়ে উঠেছে। এই ভাষায় বহুলক্ষ বই ছাপার অক্ষরে আত্মপ্রকাশ করেছে, তা ছাড়া ইস্কুলে য়ুনিভার্সিটিতে বক্তৃতামঞ্চে এই ভাষা ও সাহিত্য সম্বন্ধে আলোচনার অন্ত নেই। উচ্চারণের অবস্থা যাই হােক সর্বত্রই এর বানানের সাম্য সুপ্রতিষ্ঠিত। যে ভাষার লিখিত মূর্তি দেশে কালে এমন পরিব্যাপ্ত তাকে অল্পমাত্ৰ নাড়া দেওয়াও সহজ নয়, ghost শব্দের gost বানানের প্রস্তাবে নানা সমুদ্রের নানা তীর বাদে প্রতিবাদে কী রকম ধ্বনিত প্ৰতিধ্বনিত হয়ে উঠতে পারে সে কথা কল্পনা করলে দুঃসাহসিকের মন ভ্ৰম্ভিত হয়। কিন্তু ও দেশে বাধা যেমন দূরব্যাপী, সাহসও তেমনি প্রবল। বস্তুত আমেরিকায় ইংরেজি ভাষার বানানে যে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে তাতে কম সম্পর্ধা প্রকাশ পায় নি। মার্কিন দেশীয় বানানে through শব্দ থেকে তিনটে বেকার অক্ষর বর্জন করে বর্ণবিন্যাসে যে পাগলামির উপশম করা হলে আমাদের রাজত্বে সেটা গ্রহণ করবার যদি বাধা না থাকত তা হলে সেইসঙ্গে বাঙালির ছেলের অজীর্ণ রোগের সেই পরিমাণ উপশম হতে পারত। কিন্তু ইংরেজ আচারনিষ্ঠ, বাঙালির কথা বলাই বাহুল্য। নইলে মাপ ও ওজন সম্বন্ধে যে দশমিক মাত্ৰা য়ুরোপের অন্যত্র স্বীকৃত হওয়াতে ভুরি পরিমাণ পরিশ্রম ও হিসাবের জটিলতা কমে গিয়েছে ইংলন্ডেই তা গ্রাহ্য হয় নি, কেবলমাত্র সেখানেই তাপ পরিমাপে সেন্টিগ্রেডের স্থলে ফারেনহাইট অচল হয়ে আরামে যেটুকু হস্তক্ষেপ করা হয় সেটুকু ওরা সহ্য করতে পারে না। এই সম্বন্ধে রাজায় প্রজায় মনোভাবের সামঞ্জস্য দেখা যায়। ] ' যা হােক, তবুও ও দেশে অযথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বুদ্ধির উৎসাহ দেখতে পাওয়া যায়। সংস্কৃত বাংলা অর্থাৎ যাকে আমরা সাধুভাষা বলে থাকি তার মধ্যে তৎসম শব্দের চলন খুবই বেশি। তা ছাড়া সেই-সব শব্দের সঙ্গে ভঙ্গির মিল করে অল্প কিছুকাল মাত্র পূর্বে গড়-উইলিয়মের গোরাদের উৎসাহে পণ্ডিতেরা যে কৃত্রিম গদ্য বানিয়ে তুলেছেন তাতে বাংলার ক্রিয়াপদগুলিকে পেরেছেন, এটা সংস্কৃত নয় বটে, কিন্তু তেমনি প্রাকৃতিও নয়। যা হােক, ঐ ভাষা নিতান্ত অল্পবয়স্ক হলেও হঠাৎ সাধু উপাধি নিয়ে প্রবীণের গদিতে অচল হয়ে বসেছেন। অন্ধভক্তির দেশে উপাধির भूला आitछ। সৌভাগ্যক্রমে কিছুকাল থেকে প্রাকৃত বাংলা আচারনিষ্ঠদের পাহারা পার হয়ে গিয়ে সাহিত্যের সভায় নিজের স্বাভাবিক আসন নিতে পেরেছে। সেই আসনের পরিসর প্রতিদিন