পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

89V ब्रीका-शष्मादी বিশেষণ পদ এই ভাষায় প্রায়ই স্বরান্ত হয়ে থাকে। তার কোনো ব্যতিক্রম নেই তা নয়, কিন্তু সেগুলি সংখ্যায় অতি অল্প। সেই ব্যতিক্রমের দৃষ্টান্ত যতগুলি আমার মনে পড়ল আগে তার তালিকা লিখে দিচ্ছি। রঙ বোঝায় এমন বিশেষণ, যেমন লাল’ (‘নীল’ তৎসম শব্দ)। স্বাদ বোঝায় যে শব্দে, যেমন টক, ঝাল। তার পরে সংখ্যাবাচক শব্দ, এক থেকে দশ, ও তার পরে বিশ, ত্ৰিশ ও ষাট । এইখানে একটি কথা বলা আবশ্যক। আমাদের ভাষায় এই সংখ্যাবাচক শব্দ কেবলমাত্র সমাসে চলে, যেমন একজন, দশঘর, দুইমুখো, তিনহাপ্তা। কিন্তু বিশেষ্য শব্দের সঙ্গে জোড়া না লাগিয়ে ব্যবহার করতে হলেই আমরা সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে টি বা টা, খানা বা খানি যোগ করি, এর অন্যথা হয় না। কখনো কখনো ই স্বর যোগ করতে হয়, যেমন একই লোক, দুইই বোকা। কখনো কখনো সংখ্যাবাচক শব্দে বাক্যের শেষে স্বতন্ত্র্য দেওয়া হয়, যেমন হরি ও হর এক। এখানে ‘এক” বিশেষ্যপদ, তার অর্থ, এক সত্তা, এক হরিহর নয়। আরো দুটাে সংখ্যাসূচক শব্দ আছে যেমন, আধ্য এবং দেড়। কিন্তু এরাও সমাসের সঙ্গী, যেমন, আধখানা, দেড়খানা, ঐ দুটাে শব্দ যখন স্বাতন্ত্র্য পায় তখন ওরা হয় আধা, দেড়া। আর-একটা সমাসসংশ্লিষ্ট শব্দের দৃষ্টান্ত দেখাই, যেমন জোড়, সমাসে ব্যবহার করি জোড়হাত ; সমাসবন্ধন ছুটিয়ে দিলে ওটা হয় জোড়া হত। “হােঁট” বিশেষণ শব্দটির ব্যবহার খুব সংকীর্ণ। এক হল হেঁটমুণ্ড, সেখানে ওটা সমাসের অঙ্গ। তা ছাড়া, হেঁট হওয়া হােঁট করা। কিন্তু সাধারণ বিশেষণরূপে ওকে আমরা ব্যবহার করি নে, যেমন আমরা বলি নে, হেঁট মানুষ। বস্তুত হেঁট হওয়া, হােঁট করা জোড়া ক্রিয়াপদ, জুড়ে লেখাই উচিত। মাঝ’ শব্দটাও এই জাতের, বলি, মাঝখানে, মাঝদরিয়া, এ হল সমাস, আর বলি। মাঝা থেকে, সেটা হল প্রত্যয়যুক্ত, ‘থেকে’ প্রত্যয়টি ছড়িয়ে নিয়ে কাজে লাগাতে পারি। নে ; বলা যায়। না, মােঝ গোরু বা মােঝ ঘাের। আর-একটা ফার্সি শব্দ মনে পড়ছে সাফু'। অধিকাংশ স্থলে বিশেষণ মাত্রই সমাসের অন্তৰ্গত, যেমন সাফ কাপড়, কিন্তু ওটা যে স্বাতন্ত্র্যবান বিশেষণ শব্দ তার প্রমাণ হয়, যখন বলা যায় কাপড়টা সাফ। কিন্তু বলা যায় না কথা এক’, বলতে হয়, “কথা একটা', কিংবা, কথা একই’ । বলি, “মোট কথা এই, কিন্তু বলি নে 'এই কথাটাই মোট’। যাই হোক, দুই অক্ষরের হসন্ত বাংলা বিশেষণ হয়তো ভেবে ভেবে আরো মনে আনা যেতে পারে, কিন্তু যথেষ্টই अद07 श् । • ፦ • · অপর পক্ষে বেশি খুঁজতে হয় না যথা, বড়ো, ছোটো, মেঝে, সেজে, ভালো, কালো, ধলো, রাঙা, সাদা, ফিকে, খাটাে, রোগা, মোটা, বেঁটে, কুঁজো, ত্যাড়া, বঁকা, সিধে, কানা, খোঁড়া, বোঁচা, নুলো, ন্যাকা, হাঁদা, খাদা, টেরা, কটা, গ্যাটা, গোটা, ভেঁাদা, ন্যাড়া, ক্ষ্যাপা, মিঠে, উসা, কষা, খাসা, তোফা, কঁচা, পাকা, সোদা, বোদা, খাঁটি, মেকি, কড়া, মিঠে, চোখা, রেখা, আঁটা, ফাটা, পোড়া, ভিজে, হাজা, শুকো, গুড়ো, বুড়ো, ছোড়া, গোঁড়া, ওঁচা, খেলো, ছাদা, ঝুটো, ভীতু, আগা, গোড়া, উচু, নিচু ইত্যাদি । মত শব্দটা বিশেষ্য, ঐটে থেকে বিশেষণ, জন্ম নিতেই সে হল কেন আমি বাংলা দুই অক্ষরের বিশেষণ পদ থেকে তার অস্তম্বর লোপ করতে পারব না। তার বাংলা শব্দে কতকগুলি মুদ্রাভিঙ্গি আছে। ভঙ্গিসংকেত যেমন অঙ্গের সঙ্গে অবিচ্ছেদে যুক্ত এগুলিও তেমনি। যে মানুষ রেগেছে তার হাত থেকে ছুরিটা নেওয়া চলে, কিন্তু ভ্রর থেকে ভ্ৰকুটি নেওয়া যায় না। যেমন, তখনি, আমারো, কারো, কোনো, কখনো শব্দে ইকার, এবং ওকার কেবলমাত্র ঝোক দেবার জন্যে, ওরা শব্দের অনুবতী না হয়ে, যথাসম্ভব তার অঙ্গীভূত থাকাই