পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা শব্দতত্ত্ব 8. ভালো। যথাসম্ভব বলতে হল। এইজন্যে যে স্বরান্ত শব্দে সংকেত স্বরগুলি অগত্যা সঙ্গে থাকে, মিলে থাকে না, যেমন তোমরাও, আমরাই। কিন্তু যেখানে উচ্চারণের মধ্যে মিলনের বাধা নেই, সেখানে আমি ওদের মিলিয়ে রাখব। কেন আমি বিশেষভাবে মিলনের পক্ষপাতী একটা ছড়া দিয়ে বুঝিয়ে দেব। ዶ যেমনি যখনি দেখা দিই তার ঘরে অমনি তখনি মিথ্যা কলহ করে। কোনো কোনো দিন কহে সে নোলক নাড়ি । 설 * কারো কারো সাথে জন্মের মতো আড়ি ৷ যদি বানান করি যেমনই, যখনই, অমনই, তখনই, কোনও, কারও, দৃষ্টিকটুত্বের নালিশ হয়তো গ্রাহ্য না হতে পারে। কিন্তু যখনই’ বানানের স্বাভাবিক যে উচ্চারণ, ছন্দের অনুরোধে সেটা রক্ষা করতে চায় এমন কবি হয়তো জন্মাতেও পারে, কেননা কাল নিরবধি এবং বিপুল চ পৃথ্বী। যথা : 姆 যখনই দেখা হয় তখনই হাসে, হয়তো সে হাসি তার খুশি পরকাশে। কখনও ভাবি, ওগো শ্ৰীমতী নবীনা, কোনও কারণে এটা বিদ্রািপ কিনা ৷ আপাতত জানিয়ে রাখছি কেবল পদ্যে নয়, গদ্যেও আমি উচ্চারণ আনুগত করে কোনো, কখনো, যখনি, তখনি লিখব। এইখানে একটা প্রশ্ন তোলা যেতে পারে যে, কখনই আমি যাব না’ এবং তখনি আমি গিয়েছিলেম এ দুই জায়গায় কি একই বানান থাকা সংগত ? ? উপসংহারে এই কথাটি বলতে চাই বানানের বিধিপালনে আপাতত হয়তো মোটের উপরে আমরা বাধ্যতামূলক' নীতি অনুসরণ করে একান্ত উচ্ছঙ্খলতা দমনে যোগ দেব। কিন্তু এই দ্বিধাগ্রস্ত মধ্যপথে ব্যাপারটা থামবে না। অচিরে এমন সাহসিকের সমাগম হবে যাঁরা নিঃসংকোচে বানান সংস্কার ব্যাপারে বিশেষভাবে একটা বিষয়ে কর্তৃপক্ষেরা যে সাহস দেখিয়েছেন সেজন্যে আমি তাদের ভুরি ভুরি সাধুবাদ দিই। কী কারণে জানি নে, হয়তো উড়িষ্যার হাওয়া লেগে আধুনিক বাঙালি অকস্মাৎ মূর্ধন্য ণয়ের প্রতি অহৈতুক অনুরাগ প্রকাশ করছেন। আমি এমন চিঠি পাই যাতে লেখক শনিবার এবং শূন্য শব্দ মূর্ধন্য ণ দিয়ে লেখেন। এটাতে ব্যাধির সংক্রামকতার লক্ষণ প্রকাশ পায়। কর্নেল, গবর্নর, জর্নাল প্রভৃতি বিদেশী শব্দে তারা দেবভাষার ণত্ববিধি প্রয়োগ করে তার শুদ্ধিতা সাধন করেন। তাতে বোপদেবের সম্মতি থাকতেও পারে। কিন্তু আজকাল যখন খবরের কাগজে দেখতে পাই কানপুরে মূর্ধন্য ণ চড়েছে তখন বোপদেবের মতো বৈয়াকরণিককে তো দায়ী করতে পারি নে। কানপুরের কান শব্দের দুটাে বুৎপত্তি থাকতে পারে, এক কৰ্ণ শব্দ থেকে। ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে রেফের সংসর্গে নিয়ের মূর্ধন্যতা ঘটে। কর্ণ শব্দের 'র' গেলেই মূর্ধন্যতার অস্তিত্বের কৈফিয়ত যায় চলে। কানপুরের কান শব্দ হয়তো কানাই শব্দের অপভ্রংশ। কৃষ্ণ থেকে কান ও কানাই শব্দের আগমন। কৃষ্ণ শব্দে ঋফলার পরে মূর্ধন্য য, ও উভয়ের প্রভাবে শেষের ন মূর্ধনা হয়েছে। আধুনিক প্রাকৃত থেকে সেই ঋফলা হয়েছে উৎপাটিত। তখন থেকে বোধ করি ভারতের সকল ভাষা হতেই কানাই শব্দে মুর্ধন্যের আক্রমণের আশঙ্কা চলে গেছে। কিন্তু নতুন উপক্ৰমণিকা-পড়া বাঙালি হয়তো কোন দিন কানাই শব্দে মূর্ধন্য ণ চালিয়ে তৃপ্তিবােধ করবেন। এই রকম দুটাে-একটা শব্দ তীদের চােখ এড়িয়ে গেছে। স্বর্ণের