পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88ひ রবীন্দ্র-রচনাবলী তা হােক, উপায় নেই। আমি হয়তো একগুয়েমি করে কোনো কোনো বানানে নিজের মত চালাব। অবশেষে হার মানতে হবে তাও জানি। কেননা, শুধু যে তঁরা আইন সৃষ্টি করেন তা নয়, আইন মানাবার উপায়ও তাদের হাতে আছে। সেটা থাকাই ভালো, নইলে কথা বেড়ে যায়, কাজ বন্ধ থাকে। অতএব তাদেরই জয় হোক, আমি তো কেবল তর্কই করতে পারব, তারা পারবেন। ব্যবস্থা করতে। মুদ্রাযন্ত্র-বিভাগে ও শিক্ষা-বিভাগে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার পক্ষে সেই ব্যবস্থার আমি এখানে স্বপ্নদেশ থেকে দূরে এসে বিশ্রামচৰ্চার জন্য অত্যন্ত ব্যস্ত আছি। কিন্তু প্রারব্ধ কর্মের ফল সর্বত্রই অনুসরণ করে। আমার যেটুকু কৈফিয়ত দেবার সেটা না দিয়ে নিস্কৃতি নেই। কিন্তু এই যে দুঃখ স্বীকার করলুম এর ফল কেবল একলা আপনাকে নিবেদন করলে বিশ্রামের অপব্যয়টা অনেক পরিমাণেই অনর্থক হবে। অতএব এই পত্ৰখানি আমি প্রকাশ করতে পাঠালুম। কেননা, এই বানান-বিধি ব্যাপারে যারা অসন্তুষ্ট তারা আমাকে কতটা পরিমাণে দায়ী করতে পারেন সে তঁদের জানা আবশ্যক। আমি পণ্ডিত নই, অতএব বিধানে যেখানে পণ্ডিত্য আছে সেখানে নম্রভাবেই অনুসরণের পথ গ্রহণ করব, যে অংশটা পাণ্ডিত্যবর্জিত দেশে পড়ে সে অংশে যতটা শক্তি বাচালতা করব কিন্তু নিশ্চিত জানব, যে একদা “অন্যে বাক কবে কিন্তু তুমি রবে নিরুত্তর ।” আলমোড়া A S . Sa R ...আমি পূর্বেই কবুল করেছি যে, কী সংস্কৃত ভাষায় কী ইংরেজিতে আমি ব্যাকরণে কঁাচা। অতএব প্রাকৃত বাংলায় তৎসম শব্দের বানান নিয়ে তর্ক করবার অধিকার আমার নেই। সৌভাগ্যের বিষয় এই যে, এই বানানের বিচার আমার মতের অপেক্ষা করে না। কেবল আমার মতো অনভিজ্ঞ ও নতুন পোড়োদের পক্ষ থেকে পণ্ডিতদের কাছে আমি এই আবেদন করে থাকি যে, ব্যাকরণ বাঁচিয়ে যেখানেই বানান সরল করা সম্ভব হয় সেখানে সেটা করাই কর্তব্য তাতে জীবে দয়ার প্রমাণ হয়। এ ক্ষেত্রে প্রবীণদের অভ্যাস ও আচার্যনিষ্ঠতার প্রতি সম্মান করতে যাওয়া দুর্বলতা। যেখানে তঁদের অবিসংবাদিত অধিকার সেখানে তঁদের অধিনায়কত্ব স্বীকার করতেই হবে, অন্যত্র নয়। বানান-সংস্কার-সমিতি বোপদেবের তিরস্কার বাঁচিয়েও রেফের পর দ্বিত্ব বর্জনের ষে বিধান দিয়েছেন। সেজন্য নবজাত ও অজ্ঞাত প্রজাবর্গের হয়ে তাদের কাছে আমার নমস্কার বিশেষজ্ঞতা সকল ক্ষেত্রেই দূর্লভ। ব্যাকরণে বিশেষজ্ঞের সংখ্যা খুবই কম। এ কথা মানতেই হবে। অথচ তাদের অনেকেরই অন্য এমন গুণ থাকতে পারে যাতে একোহি দোষো গুণসন্নিপাতের জন্য সাহিত্যব্যবহার থেকে তঁদের নির্বাসন দেওয়া চলবে না। এদের জন্যেই কোনো একটি প্রামাণ্য শাসনকেন্দ্র থেকে সাহিত্যে বানান প্রভৃতি সম্বন্ধে কার্যবিধি প্রবর্তনের ব্যবস্থা থাকা একান্ত আইনবিদ্যায় যাঁদের জুড়ি কেউ নেই ঘরে বসে। তঁরা আইনকৰ্তাদের পরে কটাক্ষপাত করতে পারেন। কিন্তু কর্তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আইন ভঁরা চালাতে পারবেন না। এই কথাটা চিন্তা করেই