পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ԳՀ রবীন্দ্র-রচনাবলী “যত্নে কৃতে যদি না সিধতি, কোিহত্র দোষ” সে কথা সত্য বটে ; কিন্তু আমাদের আলোচ্য পুস্তকের সম্পাদক নিরলস হইয়া যথাসাধ্য যত্ন করিয়াছেন কি না। আমাদের সন্দেহ। রসেটি শেলীর কবিতাসমূহের যে সংস্করণ মুদ্রিত করিয়াছেন, তাহাতে তিনি প্রতি কমা ও সেমিকেলনের উপর মাথা ঘুরাইয়াছেন; ইহাতে কবির প্রতি তাহার অসাধারণ অনুরাগ ও সাধারণের সমীপে তাঁহার কর্তব্য পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রকাশ পাইতেছে। কিন্তু এরূপ তুলনা বৃথা। কোনো বিষয়েই যাহাদের সহিত মিলে না, একটা বিশেষ বিষয়ে তাহাদের সহিত তুলনা দিতে যাওয়ার অর্থ নাই। বঙ্গদেশ ইংলন্ড নহে, এবং সকল লোকই রসেটি নহে। ] শ্ৰীযুক্ত অক্ষয়চন্দ্র সরকার প্রাচীন কবিতা সংগ্রহে প্ৰবৃত্ত হইয়াছেন, এজন্য তীহাকে উৎসাহ দিয়া তঁহার কৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা সমূহ লইয়া আলোচনা করিতে প্ৰবৃত্ত হইলাম, এরূপ না করিলে কবিতা-সকলের যথার্থ মর্ম বাহির হইবার সম্ভাবনা থাকিবে না। এ বিষয়ে তর্ক বিতর্ক ও আলোচনা উথাপন করা আবশ্যক । প্রাচীন কবিতাবলীর টীকা প্রকাশের নানাবিধ দোষ থাকিতে পারে। ১. ব্যাকরণবিরুদ্ধ অর্থ ব্যাখ্যা; ২, সুভাব-বিরুদ্ধ ব্যাখ্যা; ৩, সহজ শ্লোকের প্যাচালো অর্থ ব্যাখ্যা ; ৪. দুরূহ শ্লোক দেখিয়া মৌন থাকা : ৫. সংশয়ের স্থলে নিঃসংশয় ভােব দেখানো ; ইত্যাদি। এই-সকল দোষ যদি বর্তমান পুস্তকে থাকে, তবে তাহা সংশোধন করিয়া দেওয়া আমাদের কর্তব্য কার্য। বিদ্যাপতির মধ্যে, ঈষৎ হউক, বা অধিক হউক, দুরূহ শ্লোক দেখিলে পাঠকদের সুবিধার জন্য আমরা তাহার অর্থ করিতে চেষ্টা করিব। পুস্তকে নিবিষ্ট প্রথম গীতিতে কবি রাধিকার শৈশব ও যৌবনের মধ্যবর্তী অবস্থার কথা বর্ণনা করিয়াছেন। r হাসত আপন পয়োধর হেরি | | দিনে দিনে অনঙ্গ উঘািরয়ে অঙ্গ ৷ পূ: ২ : সম্পাদক ইহার শেষ দুই চরণের এইরূপ টীকা করিতেছেনঃ “প্রথম বর্ষার মতো নূতন নূতন ভাবভঙ্গী প্রকাশ করিতে লাগিল। বদরি (হিন্দি) বর্ষ। নবরঙ্গ শব্দে নারাঙ্গালেবু অভিধানে থাকিলে এই চরণের অন্যরূপ অর্থ হয়। কিন্তু বদরি শব্দের বর্ষা অর্থও সুপ্ৰসিদ্ধ নহে।” “বৰ্ষার মতো ভাবভঙ্গী প্রকাশ করা” শুনিলেই কেমন কানে লাগে যে, অর্থটা টানাবােনা। নবরঙ্গ শব্দে নারাঙ্গালেবু অভিধানে থাকিলে কিরূপ অর্থ হয় তাহাও দেখা উচিত ছিল। “প্ৰথম বর্ষার মতো ভাব-ভঙ্গী প্রকাশ করিতে লাগিল” এরূপ অৰ্থ করিলে পুন শব্দের সার্থকতা কী থাকে? যাহা৷ হউক, এ স্থানের অর্থ অতিশয় সহজ, কেবল উপরে উদ্ধৃত চারি চরণের মধ্যে শেষের দুই চরণকে প্রথম দুই চরণের সহিত পৃথক করিয়া পড়াতেই ইহার অর্থবােধে গােল পড়ে। নিম্নলিখিত অর্থটি সহজ বলিয়া বােধ হয়। “রাধা নির্জন কতবার আপনার উরজ দেখেন, আপনার পয়ােধর দেখিয়া হাসেন। সে পয়ােধর কিরূপ? না, প্রথমে বদরির (কুল) ন্যায় ও পরে নারাঙ্গার ন্যায়।” নবরঙ্গ শব্দের অর্থ নারাঙ্গা অভিধানে নাই। নাগরঙ্গ’ ও ‘নাৰ্যঙ্গ” শব্দ নারাঙ্গা। বলিয়া উক্ত হইয়াছে। কিন্তু নবরঙ্গ শব্দের অর্থ নারাঙ্গা, সহজেই অনুমান করা যাইতে পারে। বিদ্যাপতির আর-একটি পদ হইতে এই একই ভাবের দুইটি চরণ উদধূত করিয়া দিতেছি, তাহাতে আমাদের কথা আরো স্পষ্ট হইবে। , , , ' . . , ༣་