পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& GNR बदोश-खानावली সংগীত যেখানে আপনি স্বাতন্ত্র্যে বিরাজ করে সেখানে তার নিয়ম সংযমের যে শুচিতা প্ৰকাশ পায়, বাণীর সহযোগে গানরূপে তার সেই শুচিত তেমন করে বাঁচিয়ে চলা যায় না বটে ; কিন্তু পরম্পরাগত সংগীতরীতিকে আয়ত্ত করলে তবেই নিয়মের ব্যত্যয়সাধনে যথার্থ অধিকার জন্মে। কবিতাতেও ছন্দের রীতি আছে- সে রীতি কোনো বড়ো কবি নিখুঁতভাবে সাবধানে বঁচিয়ে চলবার চেষ্টা করেন না- অর্থাৎ তারা নিয়মের উপরেও কর্তৃত্ব করেন- কিন্তু সেই কর্তৃত্ব করতে গেলেও নিয়মকে স্বীকার করা চাই। স্বাতন্ত্র্য যেখানে সেখানে কলাবিদ্যার স্থান নেই। এইজন্যে নিজের সৃজনশক্তিকে ছাড়া দিতে গেলেই শিক্ষা ও সংযমশক্তির বেশি দরকার হয়। সংগীতসংঘ আমাদের দেশের সংগীতকে দেশের মেয়েদের কণ্ঠে প্রতিষ্ঠিত করবার ভার নিয়েছেন। তঁদের এই সাধনার গভীর সার্থকতা আছে। আমাদের দুই রকমের খাদ্য আছেএকটি প্রয়োজনের, আর-একটি অপ্রয়োজনের ; একটি অন্ন, আর-একটি অমৃত। আয়ের ক্ষুধায় আমরা মর্ত্যলোকের সকল জীবজন্তুর সমান, অমৃতের ক্ষুধায় আমরা সুরালোকের দেবতাদের দলে। সংগীত হচ্ছে অমৃতের নানা ধারার মধ্যে একটি। দেশকে অন্নের পরিবেশন তো মেয়েদের হাতেই হয়—আর অমৃতের পরিবেশনও কি তাদের হাতেই নয়? এ কথা মনে রাখতে হবে, যা অমৃত, যা প্রয়োজনকে অতিক্রম করে আপনাকে প্রকাশ করে, মনুষ্যত্বের চরম মহিমা তাতেই। যে জাতি পেটুক সে কেবলমাত্র নিজের প্রতিদিনের গরজ মিটিয়ে চলেছে, মৃত্যুতেই তার একান্ত মৃত্যু। গ্ৰীস যে আজও অমর হয়ে আছে সে তার ধনে, ধান্যে, রাষ্ট্ৰীয় প্রতাপে নয় ; আত্মার আনন্দরূপ যা-কিছু সে সৃষ্টি করেছে তাতেই সে চিরদিন বেঁচে আছে। প্রত্যেক জাতির উপরে ভার আছে সে মর্ত্যলোকে আপনি অমরলোকের সৃষ্টি করবে। গ্ৰীস সেই নিজের অমরাবতীতে আজও বাস করছে। সংগীত মানবের সেই আনন্দরূপ- সে মানবের নিজের অভাবমোচনের অতীত বলেই সর্বমানবের এবং সর্বকালের- রাজ্য সাম্রাজ্যের ঐশ্বর্য ধবংস হয়ে যায়, কিন্তু এই আনন্দরদীপ চিরন্তন। যে-সকল ঘোরতর প্রবীণ লোক ওজন-দরে জিনিসের মূল্য বিচার করেন, সারবান বলতে যাঁরা ভারবান বোঝেন, তঁরা সংগীত প্রভৃতি কলাবিদ্যাকে শৌখিনতা বলে অবজ্ঞা করে থাকেন। তঁরা জানেন না যাদের বীর্য আছে সৌন্দর্য তাদেরই। যে শক্তি আপনাকে শক্তিরূপেই প্রকাশ করে সে হল পালোয়ানি, কিন্তু শক্তির সত্যরূপ হচ্ছে সৌন্দর্য। গাছের পূর্ণ শক্তি তার ফুলে ; তার মোটা গুড়িটার মধ্যে সে কেবল আপনিই থাকে, কিন্তু তার ফুলের মধ্যে সে যে ফল ফলায় তারই বীজের ভিতর ভাবীকালের অরণ্য, অর্থাৎ তার অমরতা। সাহিত্যে, সংগীতে, সর্বপ্রকার কলাবিদ্যায় প্রাণশক্তি আপন অমরতাঁকে ফলিয়ে তোলে- আপিস-আদালতে কলে-কারখানায় নয়। উপনিষদ বলেছেন- জন্মেছে বলেই সকলে অমর হয় না, যারা অসীমকে উপলব্ধি করেছে। ‘অমৃতাস্তে ভবন্তি’। অভাবের উপলব্ধিতে কাপড়ের কল, পাটের বস্তার কারখানা- অসীমের উপলব্ধিতেই সংগীত, অসীমের উপলব্ধিতেই আমরা সৃষ্টিকর্তা। যে সৃষ্টিকর্তা চন্দ্ৰসূর্যের সিংহাসনে বসে দরবার করছেন তিনি যে গুণী জাতিকে শিরোপা দিয়ে বলেন, ‘সাবাস!! আমার সুরের সঙ্গে তোমার সুর মিলছে - সেই ধন্য, সেই বেঁচে যায়, তাঁর অমৃতসভার পাশে তার চিরকালের আসন পাকা হয়ে Ez vodyr ১ প্রতীচ্যদেশের মনীষীসমাজে বিপুল সমাদর-লাভান্তে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন (জুলাই ১৯২১) উপলক্ষে ‘সংগীত-সংঘের বার্ষিক উৎসবে উক্ত”। . . . " ' . . . . . . .