পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

We O8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী মোকাবিলায় মীমাংসা করাই সহজ। লিখিত বাক্যের দ্বারা এর শেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব হবে কি না জানি নে। ছাপাখানা-শাসিত সাহিত্যে ছন্দোবিলাসী কবির এই এক মুশকিল-নিজের কণ্ঠ স্তব্ধ, পরের কণ্ঠের করুণার উপর নির্ভর। সেইজন্যেই আমাকে সম্প্রতি এমন কথা শুনতে হচ্ছে যে, আমি ছন্দ ভেঙে থাকি... আকাশের দিকে চেয়ে বলি— ‘চতুরানন, কোন কানওয়ালাদের 'পরে এর বিচারের ভার!' ' ৫। আজি গন্ধবিধুর সমীরণে'-কবিতাটি সহজ নিয়মেই পড়া উচিত। অবশ্য, এর পঠিত ছন্দে ও গীত ছন্দে প্রভেদ আছে! : ৬ । “জনগণমনঅধিনায়ক’ গানটায় যে মাত্ৰাধিক্যের কথা বলেছ সেটা অন্যায় বল নি। ঐ বাহুলোর জনো ‘পঞ্জাব’ শব্দের প্রথম সিলেবলটাকে দ্বিতীয় পদের গেটের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখি পনা / জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা ইত্যাদি। ‘পঞ্জাবীকে ‘পঞ্জব” করে নামটার আকার খর্ব করতে সাহস হয় নি, ওটা দীর্ঘকায়াদের দেশ । ছন্দের অতিরিক্ত অংশের জন্যে একটু তফাতে আসন পেতে দেওয়া রীতি বা গীতি বিরুদ্ধ নয় ; S C፡ “ናW፲5ኙ፪፥ $ $ S እ ১। আবার এরা ঘিরেছে মোর মন’-- এই পঙক্তির ছন্দোমাত্রার সঙ্গে ‘দাহ আবার বেড়ে ওঠে। ক্রমের মাত্রার অসাম্য ঘটেছে এই তোমার মত। ক্ৰমে’ শব্দটার ‘ক্রা’র উপর যদি যথোচি৩ ঝোঁক দাও তা হলে হিসাবের গোল থাকে না। বেড়ে ওঠেকারমে'— বস্তুত সংস্কৃত ছন্দের নিয়মে "ক্র’ পরে থাকাতে ‘ওঠোর ‘এ’ স্বরবর্ণে মাত্রা বেড়ে ওঠা উচিত। তুমি বলতে পারো আমরা সাধারণত শব্দের প্রথমবর্ণস্থিত ‘র’ফলাকে দুই মাত্রা দিতে কৃপণতা করি। “আক্ৰমণ’ শব্দের ‘ক্রাকৈ তার প্রাপ্য মাত্রা দিই, কিন্তু ‘ওঠে ক্রমের ‘ক্র’ হ্রস্বমাত্রায় খর্ব করে থাকি। আমি সুযোগ বুঝে বিকল্পে দুই রকম নিয়মই চালাই। ২। ভকত । সেথায় । খোলো দ্বা। ০০র। — এইরকম ভাগে কোনো দোয্য নেই। কিন্তু তুমি যে ভাগ করেছিলে । র০০ । এটা চলে না ; যেহেতু ‘র’ হসন্ত বর্ণ, ওর পরে স্বরবর্ণ নেই, অতএব টানব কাকে । ৩। জনগণ’ গান যখন লিখেছিলেম। তখন ‘মারাঠা” বানান করি নি। মারাঠিরাও প্রথম বর্ণে আকার দেয় না। আমার ছিল মরাঠা”। তার পরে যাঁরা শোধন করেছেন তঁরাই নিরাকারকে সাকার করে তুলেছেন, আমার চোখে পড়ে নি। 〈〉 যেখানে আর্টের উৎকর্ষ সেখানে গুণী ও গুণাঞ্জদের ভাবের উচ্চশিখর। সেখানে সকলেই অনায়াসে পৌঁছবে এমন আশা করা যায় না- সেইখানেই নানা রঙের রসের মেঘ জমে ওঠেসেই দুৰ্গম উচ্চতায় মেঘ জমে বলেই তার বর্ষণের দ্বারা নীচের মাটি উর্বরা হয়ে ওঠে। অসাধারণের সঙ্গে সাধারণের যোগ এমনি করেই হয়, উপরকে নীচে বেঁধে রেখে দিলে হয় না। যারা রসের সৃষ্টিকর্তা তাদের উপর যদি হাটের ফর্মশ চালানো যায়, তা হলেই সর্বনাশ ঘটে।