পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংগীতচিন্তা EO (? করতে পারে, তা হলেই আপনিই তার উপরে সর্বলোকের অধিকার হবে। কিন্তু, সকলের অধিকার হলেই যে হাতে হতে সকলে অধিকার লাভ করতে পারে, ভালো জিনিস এত সস্তা নয়। বসন্তে যে ফুল ফোটে সে ফুল তো সকলেরই জন্যে, কিন্তু সকলেই তার মর্যাদা সমান বোঝে। এ কথা কেমন করে বলব ? বসন্তে আমের মুকুলে অনেকেরই মন সায় দিলে না। ব’লেই কি তাকে দোষ দেব? বলব “তুমি কুমড়ো হলে না কেন? বলব কি-গরিকের দেশে বকুল ফুল ফোটানো বিড়ম্বনা- সব ফুলেরই বেগুনের ক্ষেত হয়ে ওঠা নৈতিক কর্তব্য? বকুল ফুলের দিকে যে অরসিক চেয়ে দেখে না, তার জন্যে যুগ-যুগান্তর ধরেই বকুল ফুল যেন অপেক্ষা করে থাকে ; মনের খেদে এবং লোকহিতৈষীদের তাড়নায় সে যেন কচুবিন হয়ে ওঠবার চেষ্টা না করে। গ্ৰীসে সৰ্ব্বসাধারণের জনোই সফোর্কাস এস্কিলাসের নাটক রচিত ও অভিনীত হয়েছিল, কেবল বিশিষ্ট কতিপয়ের জন্য নয়। সেখানকার সাধারণের ভাগ্য ভালো যে, তারা কোনো গ্রাসীয় দাশুরায়ের শরণাপন্ন হয় নি। সাধারণকে শ্রদ্ধাপূর্বক ভালো জিনিস দিতে থাকলে ক্রমশই তার মন ভালো জিনিস গ্রহণ করবার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। কবিকে আমরা যেন এই কথাই বলি-“তোমার যা সর্বশ্রেষ্ঠ তাই যেন তুমি নির্বিচারে রচনা করতে পারো।" কবি যদি সফল হয় তবে সাধারণকে বলব।-- “যে জিনিস শ্রেষ্ঠ তুমি যেন সেটি গ্রহণ করতে পারে।' যারা রূপকার, যারা রসাম্রষ্টা, তারা আর্টের সৃষ্টি সম্বন্ধে সত্য ও অসন্তা, ভালো ও মন্দ, এই দুটি মাত্র শ্রেণীভেদই জানে ; বিশিষ্ট কতিপয়ের পথা ও ইতার-সাধারণের পথা বলে কোনো ভেদ তাদের সামনে নেই ; শেকসপীিয়র সর্বসাধারণের কবি বলে একটা জনশ্রুতি প্রচলিত আছে, কিন্তু জিজ্ঞাসা করি হামলেট কি সর্বসাধারণের নাটক ? কালিদাস কোন শ্রেণীর কবি জানি নে, কিন্তু তাকে আপামর সাধারণ সকলেই কবি বলে প্ৰশংসা করে থাকে। জিজ্ঞাসা করি- যদি মেঘদূত গ্রামের দশজনকে ডেকে শোনানো যায়, তা হলে কি সেই অত্যাচার ফৌজদারি দণ্ডবিধির আমলে আসতে পারে না ? সৰ্ব্বসাধারণের মোক্তার যদি কালিদাসের আমলে বিক্ৰমাদিতোর সিংহাসন বেদখল করে কালিদাসকে ফর্মাশে বাধা করতেন, তা হলে মেঘদূতের জায়গায় যে পদাপাঠ তৈরি হত, মহাকাল কি সেটা সহ্য করতেন? আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করো এ সমস্যার মীমাংসা কী, আমি বলব- মেঘদূত গ্রামের দশজনের দ্রুনেই, কিন্তু যাতে সেই দশজনের মেঘদূতে নিজের অধিকার উপলব্ধি করতে পারে, তারই দায়িত্ব দশোত্তরবর্গের লোকের। যে দশজন মেঘদূত বোঝে না, তাদের খাতিরে মেঘদূতের বদলে পদ্ম-ভ্রমরের পাঁচালিতে সম্ভা অনুপ্রাসের চকমকি ঠোক কবির দায়িত্ব নয়। কৃত্রিমতা সকল কবি সকল আটিস্টের পক্ষেই দূষণীয়, কিন্তু যা সকলেই অনায়াসে বোঝে সেটাই অকৃত্রিম আর যা বুঝতে চিত্তবৃত্তির উৎকর্ষসাধনের দরকার সেটাই কৃত্রিম এ ধরনের কথা $Eß日 8 . ২৯ জুলাই ১৯৩৭ কীর্তনগীত আমি অনেক কাল থেকেই ভালোবাসি। ওর মধ্যে ভাবপ্রকাশের যে নিবিড় ও গভীর নাট্যশক্তি আছে সে আর-কোনো সংগীতে এমন সহজভাবে আছে বলে আমি জানি নে। পাহিত্যের ভূমিতে ওর উৎপত্তি, তার মধ্যেই ওর শিকড়, কিন্তু ও শাখায় প্রশাখায়। ফলে ফুলে পৰিবে সংগীতের আকাশে স্বকীয় মহিমা অধিকার করেছে। কীৰ্তন-সংগীতে বাঙালির এই