পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VSo রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী গানের বিরাট ভূমিকার উপরে নব নব যুগের নব নব যে সৃষ্টি স্বপ্রকাশ তার স্থান নেই-ঐখানে হাতকড়ি-পরা বন্দীদের পুনঃপুনঃ আবর্তনের অনতিক্রমণীয় চক্ৰপথ আছে মাত্র এমনতরো নিন্দোক্তি যাঁরা স্পর্ধা-সহকারে ঘোষণা করে থাকেন তাদেরই প্রতিবাদ করবার জন্যই আমার মতো বিদ্রোহীদের জন্ম—সেই প্রতিবাদ ভিন্ন প্রণালীতে কীৰ্তনকাররাও করে গেছেন। ইতি ৭ই জানুয়ারি ১৯৩৫ ৷ ... " রবীন্দ্ৰনাথ ঠাকুর কাল পর্যন্ত গেল বসন্ত-উৎসবের আয়োজনে। আগামী কাল চলেছি কলকাতায়। এরই মাঝখানে এক টুকরো অবকাশ-সংক্ষেপে সারতে হবে তোমার ফরমাশ। তোমাদের ওখানে গানের মজলিশে ছায়ানট গাওয়া হয়েছিল। ঘড়ি দেখি নি, কিন্তু অন্তরে যে ঘড়িটা রক্তের দোলায় চলে তাতে মনে হল এক ঘণ্টা পেরোলো বা। ছায়ানটের যত রূপরস্পােস্তর আছে, তানকর্তব সারেগম, যত রকম লয়ে-বিলয়ে তাকে উলটােনো পালটানো যেতে পারে, তার কিছুই বাদ পড়ে নি। আমার অভিমত কী জানতে চাও- সময় খারাপ, বলতে সাহস করি নে। তোমাদের মেজাজ ভালো নয়। মতবিরোধ নিয়ে তোমরা যাকে যুক্তি বলে আমরা তাকে বলি গাল—ঘটাতে ভয় করি। তা হােক, গীত-আলোচনায় যদি তোমার কানের সঙ্গে আমার কানের প্রভেদ দেখতে পাও তা হলে এই বলে তার কারণ নির্ণয় কোরো যে তুমিই বিজ্ঞ, আমি অনভিজ্ঞ ; তারও উর্ধে উঠে লোকবিশ্রাত উদারকর্ণসম্পন্ন জীবের উপমা ব্যবহার কোরো না- এরকম সাহিত্যরীতিতে আমরা অভ্যন্ত নই। : জানতে চেয়েছ ভালো লাগল কি না। লেগেছে। বইকি, কিন্তু ভালো লগাই শেষ কথা নয়। বেঙ্গল স্টোর্সে গিয়ে যখন অসংখ্য রকম দামী কাপড় সারা প্রহর ধরে ঘেঁটে বেড়াই, ভালো লাগে, আরো ভালো লাগে, থেকে থেকে চমক লাগে, সংগ্রহের তারিফ করতে হয়। কিন্তু, সুন্দরীর গায়ে যখন মানানসই একখানি মাত্র শাড়ি দেখি, বলি : বাস। হয়েছে। বলি নে ক্রমাগত সব কটা শাড়ি ওর গায়ে চাপালে ভালোর মাত্রা বাড়তেই থাকবে। সব কাপড়গুলোই সমজদারের চোখে চমৎকার ঠেকতে পারে, যত সেগুলো উলট-পালটে নেড়ে-চেড়ে দেখে ততই তারা বলে ওঠে ; ক্যা তারিফ ! সোভান আল্লা! ঠিকঠাক বলতে পারে কোনটাতে কত ভরি সোনার জরি, আঁচলার কাজ কাশ্মীরের না মাদুরার। মাঝের থেকে চাপা পড়ে যায় স্বয়ং সুন্দরী। ইংরেজি ভাষায় 3C5 if, f*AT (ST: Art is never an exhibition but a revelation Exhibitionএর গর্ব তার অপরিমিত বহুলত্বে, revelation-এর গৌরব তার পরিপূর্ণ ঐক্যে। সেই ঐক্যে থামা বলে একটা পদার্থ আছে, চলার চেয়ে তার কম মূল্য নয়। সে থামা অত্যন্ত জরুরি। ওস্তাদী গানে সেই জরুরি নেই, সে কেন যে কখনোই থামে, তার কোনো অনিবাৰ্য কারণ দেখি নে। অথচ সকল আর্টেই সেই অনিবাৰ্যতা আছে, এবং উপাদান-প্রয়োগে তার সংযম ও বাছাই আছে। বস্তুত ছায়ানটের ব্যাপক প্রদর্শনী আর্ট নয়-বিশেষ গানে বিশেষ সংযমে বিশেষ রূপের সীমাতেই ছায়ানট আর্ট হতে পারে। সে রূপটাকে তানে-কর্তবে তুলো ধুনে দিতে থাকলে বিশেষজ্ঞসম্প্রদায়ের সেটা যতই ভালো লাগুকি-না, আমি তাকে আর্টের শ্রেণীতে গণ্যই করব না। স্যাকরার দোকানে