পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'NWO WY আর আমাদের এখনকার কালের গ্র্যামোফোন-সঞ্চারী গীতপতঙ্গের দুর্বল গুঞ্জনকেও প্রশ্রয় দেবে না। তার সৃষ্টি অপূর্ব হবে, গভীর হবে, বর্তমান কালের চিত্তশঙ্খকে সে বাজিয়ে তুলবে নিত্যকালের মহাপ্রাঙ্গণে। কিন্তু, গািনসৃষ্টিতে আজ যেগুলিকে ছোটো দেখাচ্ছে, অসম্পূর্ণ দেখাচ্ছে, তারা পূর্ব দিগন্তে খণ্ড ছিন্ন মেঘের দল, আষাঢ়ের আসন্ন রাজ্যভিষেকে তারা নিমন্ত্রণপত্র বিতরণ করতে এসেছে- দিগন্তের পরপারে রথচক্ৰনিৰ্ঘোেষ শোনা যায়। ইতি ৬ই জুলাই ১৯৩৫ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পুঃ- বাংলা যন্ত্রসংগীত সৃষ্টি কোন লক্ষো পৌছবে তা বলা কঠিন, প্রতিভার লীলা অভাবনীয়। এক কালে থিয়েটারে কনসার্ট নামে যে কদৰ্য অত্যাচারের সৃষ্টি হয়েছিল সেটা মরেছে এইটেই 5፻፫ጫIRéoማቕ ! d কল্যাণীয়েষ্ণু । ...এই সূত্রে সংগীত সম্বন্ধে একটা কথা বলে রাখি। সংগীতের প্রসঙ্গে বাঙালির প্রকৃত বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা উঠেছিল। সেইটেকে আরো একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। বাঙালিস্বভাবের ভাবালুতা সকলেই স্বীকার করে। হািদয়োঙ্গাসকে ছাড়া দিতে গিয়ে কাজের ক্ষতি করতেও বাঙালি প্রস্তুত। আমি জাপানে থাকতে একজন জাপানি আমাকে বলেছিল, 'রাষ্ট্রবিপ্লবের আর্ট তোমাদের নয়। ওটাকে তোমরা সদায়ের উপভোগ্য করে তুলেছ ; সিদ্ধিলাভের জন্য যে তেজকে, যে সংকল্পকে গোপনে আত্মসাৎ করে রাখতে হয়, গোড়া থেকেই তাকে ভাবাবেগের তাড়নায় বাইরের দিকে উৎক্ষিপ্ত বিক্ষিপ্ত করে দাও!” এই জাপানির কথা ভাববার যোগ্য। সৃষ্টির কার্য যে-কোনো শ্রেণীর হোক, তার শক্তির উৎস নিভৃতে গভীরে ; তাকে পরিপূর্ণতা দিতে গেলে ভবিসংযমের দরকার। যে উপাদানে উচ্চ অঙ্গের মূর্তি গড়ে তোলে তার মধ্যে প্রতিরোধের কঠোরতা থাকা চাই ; ভেঙে ভেঙে, কেটে কেটে তার সাধনা। জল দিয়ে গলিয়ে যে মৃৎপিণ্ডকে শিল্পরূপ দেওয়া যায়। তার আয়ু কম, তার কণ্ঠ ক্ষীণ। তাতে যে পুতুল গড়া যায়, সে নিধুবাবুর টপ্লার মতোই ভঙ্গুর। উচ্চ অঙ্গের আর্টের উদ্দেশ্য নয় দুই চক্ষু জলে ভাসিয়ে দেওয়া, ভাবাতিশযে বিহবল করা: তার কাজ হচ্ছে মনকে সেই কল্পলোকে উত্তীর্ণ করে দেওয়া যেখানে রূপের পূর্ণতা। সেখানকার সৃষ্টি প্রকৃতির সৃষ্টির মতোই ; অর্থাৎ সেখানে রূপ কুরূপ হতেও সংকোচ করে না ; কেননা তার মধ্যেও সত্যের শক্তি আছে- যেমন মরুভূমির উট, যেমন বর্ষার জঙ্গলে ব্যাঙ, যেমন রাত্রির আকাশে বাদুড়, যেমন রামায়ণের মন্থরা, মহাভারতের শকুনি, শেক্সপীয়রে ইয়াগো। : আমাদের দেশের সাহিত্যাবিচারকের হাতে সর্বদাই দেখতে পাই আদর্শবাদের নিক্তি ; সেই নিক্তিতে তারা এতটুকু কুঁচ চড়িয়ে দিয়ে দেখে তারা যাকে আদর্শ বলে তাতে কোথাও কিছুমাত্র। কম পড়েছে কিনা। বঙ্কিমের যুগে প্রায় দেখতে পেতুম অত্যন্ত সূক্ষ্ম-বোধবন সমালোচকেরা নানা উদাহরণ দিয়ে তর্ক করতেন- ভ্ৰমরের চরিত্রে পতিপ্রেমের সম্পূৰ্ণ আদর্শ কোথায় একটুখানি ক্ষুন্ন