পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&ኃbrbr রবীন্দ্রক্স-রচনাবলী যন্ত্র -যোগে বিদ্যাপতির ‘ভরাবাদর মাহভাদর" পদটিতে মনের মতো সুর বসাইয়া বর্ষার রাগিণী গাহিতে গাহিতে বৃষ্টিপাতমুখরিত জলধারাচ্ছন্ন মধ্যাহ্ন খ্যাপার মতো কাটাইয়া দিতাম। কখনো-বা সূর্যান্ডের সময় আমরা নীেকা লইয়া বাহির হইয়া পড়িতাম ; জ্যোতিদাদা বেহালা বাজাইতেন, আমি গান গাহিতাম- পূরবী রাগিণী হইতে আরম্ভ করিয়া যখন বেহাগে গিয়া পোছিতাম তখন পশ্চিমতটের আকাশে সোনার খেলনার কারখানা একেবারে নিঃশেষে দেউলে হইয়া গিয়া পূর্বকনান্ত হইতে চাদ উঠিয়া আসিত। আমরা যখন বাগানের ঘাটে ফিরিয়া আসিয়া নদীতীরের ছদটার উপরে বিছানা করিয়া বসিতাম। তখন জলে স্থলে শুভ্ৰ শান্তি, নদীতে নীেকা প্রায় নাই, তীরের বনরেখা অন্ধকারে নিবিড়, নদীর তরঙ্গহীন প্রবাহের উপর আলো বিক ঝিক করিতেছে। - কারোয়ার হইতে ফিরিবার সময় (১৮৮৩] জাহাজে ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ'-এর কয়েকটি গান লিখিয়াছিলাম। বড়ো একটি আনন্দের সঙ্গে প্রথম গানটি জাহাজের ডেকে বসিয়া সুর দিয়া-দিয়া গাহিতে্যু-গাহিতে রচনা করিয়াছিলাম হ্যাদে গো নন্দরানী, আমাদের শ্যামকে ছেড়ে দাওআমরা রাখালবালক গোষ্ঠে যাব, আমাদের শ্যামকে দিয়ে যাও। সকালের সূর্য উঠিয়াছে ফুল ফুটিয়াছে, রাখালবালকরা মাঠে যাইতেছে- সেই সূর্যোদয়, সেই ফুল ফোটা, সেই মাঠে বিহার, তাহারা শূন্য রাখিতে চায় না ; সেইখানেই তাহারা তাঁহাদের শ্যামের সঙ্গে মিলিত হইতে চাহিতেছে, সেইখানেই অসীমের সাজ-পরা রূপটি তাহারা দেখিতে চায় ; সেইখানেই মাঠেঘাটে বনে-পর্বতে অসীমের সঙ্গে আনন্দের খেলায় তাহারা যোগ দিবে। বলিয়াই তাহারা বাহির হইয়া পড়িয়াছে ; দূরে নয়, ঐশ্বর্যের মধ্যে নয় ; তাহদের উপকরণ অতি সামান্য, পীত ধড়া ও বনফুলের মালাই তাহদের সাজের পক্ষে যথেষ্ট- কেননা, সর্বত্রই যাহার আনন্দ তাহাকে কোনো বড়ো জায়গায় খুজিতে গেলে, তাহার জন্য আয়োজন আড়ম্বর করিতে গেলেই, লক্ষ্য হারাইয়া ফেলিতে হয়। SO আমি যে সময়কার কথা বলিতেছি সে সময়ের দিকে তাকাইলে দেখিতে পাই তখন শরৎ ঋতু সিংহাসন অধিকার করিয়া বসিয়াছে। তখনকার জীবনটা আশ্বিনের একটা বিভীীর্ণ স্বচ্ছ অবকাশের মাঝখানে দেখা যায়- সেই শিশিরে-ঝলমল-করা সরস সবুজের উপর সোনাগলানো রৌদ্রের মধ্যে, মনে পড়িতেছে, দক্ষিণের বারান্দায় গান বঁধিয়া তাহাতে যোগিয়া সুর লাগাইয়া গুনগুন করিয়া গাহিয়া বেড়াইতেছি- সেই শরতের সকালবেলায়।-- আজি শরততপনে প্রভাতস্বপনে .. কী জানি পরান কী যে চায়। বেলা বাড়িয়া চলিতেছে, বাড়ির ঘণ্টায় দুপুর বাজিয়া গেল, একটা মধ্যাহের গানের আবেশে