পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sig*ffi68 Գ Օ (: অপেক্ষাকৃত অবিচলিত থাকা আমার পক্ষে এইজন্যে সহজ যেহেতু জীবনে অনেক অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে এসেছি। প্রথম যখন কবিতায় আধুনিকতা প্রকাশ করেছিলুম। সে অনেক দিনের কথা, তোমাদের জন্ম হয় নি। তখন প্রবীণের দল, যাঁদের কাব্যে শাস্ত্ৰসম্বন্ধীয় অলংকার ছিল তৎকালীন হিন্দুস্থানী ছাঁচে ঢালা তীরা আমার অশাস্ত্রীয় ছন্দ প্রভৃতি সম্বন্ধে ঠিক এই রকম কথাই বলেছিলেন, অর্থাৎ তঁদের অভ্যাসপীড়া ঘটিয়েছি বলে কোনো মতেই আমার রচনার ধারা তঁদের একটুও ভালো লাগছিল না। এত বড়ো জোরালো কথার উপরে কারো জোর খাটে না- কিন্তু দেখলুম। চুপ করে গেলেই তার জোর আপনিই মরে আসে। আমার কাব্য ভালো লাগে না এমন লোক বিপুল পৃথিবীতে দুর্লভ হবে না-কিন্তু আমার কাব্য ও ছন্দের ধারাটা ব্যবহার করছেন না। এমন কবি বাংলায় আজ নেই। এ কথা বললে অহংকারের মতো শুনতে হবে। তবু কথাটা মিথ্যে হবে না- যখন প্রথম সাধুনিয়ম ভাঙা চালে কাব্য লিখতে আরম্ভ করেছি সেটাকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বললেও চলে, তার পরে আজ বয়স হল সত্তর, ইতিমধ্যে ইতিহাসটা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে তা দেখবার সময় পাওয়া গেল- কিন্তু আমার গান সম্বন্ধে ইতিহাসের গতি নিৰ্ণয় করবার সময় পাব না, তোমরা হয়তো কিছু আভাস পেতে পারবে, তখন আমার সময় চলে গেছে, কারণ ভূতকাল থেকে ভূতের কাল পর্যন্ত কোনো সেতু নেই!... ইতি ২১ ভাদ্র ১৩৩৮ ○ চিত্রাঙ্গদা ॥} সমালোচনা তোমার হাতে পড়েছে খুশি হয়েছি। কাব্যভ্রম করে ওর প্রতি বাণ সন্নিপাত করলে নিদারুণ অপঘাত ঘটত। নৃত্যকলার রােজ্যাভিষেকে সাহিত্যকে স্থান নিতে হয় সিংহাসনের পাদপীঠে। সংগীতে বাণী এবং সুর সমান গৌরবে পাশাপাশি বসতেও পারে যদিও সেখানে বাণীকে বসতে হয় বামে, স্ত্রীজনোচিত আত্মসংবরণ করে। কণ্ঠের পথে বাণীতে এবং সুরেতে হাত ধরাধরি করবার সুযোগ পায়—কিন্তু নৃত্য হোলো মূলত নির্বাকের ভাষা। বিশ্বভুবন মুক, মহেন্দ্রের সভায় তাঁর আত্মনিবেদন নৃত্যে। নৃত্যের রঙ্গক্ষেত্র বিরাট, তুণে তৃণে হাওয়ার হিল্লোল থেকে আরম্ভ করে তারায় তারায় ছন্দের মালা গাঁথা পর্যন্ত চলেছে ভঙ্গিলীলার নিত্য মহোৎসব। মানুষের সুখ-দুঃখে এই বিশ্বের ভাষাকে যখন আহবান করা হয় বাণী তখন কেবলমাত্র ছন্দের বাহিনীরূপেই তার সাহচর্য করে। কাব্যে গানে যে অনির্বচনীয়তার প্রকাশ ঘটে মুখ্যত সেটা বচনে নয়, সেটা ছন্দে। এ কথা আজ সবাই জানে বিদ্যুৎকণার ছন্দেবৈচিত্র্যেই বিশ্বের সৃষ্টিবৈচিত্ৰ্য। বিশ্বের সেই সৃষ্টি উৎস থেকেই ছন্দের ধারাকে মানুষের অঙ্গের মধ্যে সঞ্চারিত করলে সৃষ্টিলীলা অব্যবহিত ভাবে প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে, তখন যে অরসিক বলে মানে কী হােলো, সে গোলাপের ব্যাখ্যার জন্যেও মন্দ্রিনাথকে ডাকতে ছোটে। আমরা যে-সব প্রদেশে চিত্রাঙ্গদার নৃত্যরঙ্গ নিয়ে গেছি সে সব জায়গায় বাংলা ভাষা নিরর্থক, সেই কারণেই প্রমাণ হয়ে, গেছে, রসের প্রকাশে অর্থের সার্থকতা কম। ছাপার অক্ষরে চিত্রাঙ্গদা বইখানা সেই কারণে অত্যন্ত লক্তিত— নৃত্যের ছন্দেই যার আব্রু, সেই বাণী এখানে নয়। সেই কারণে বিচারসভায় বাণীকে আড়ালে রেখে এই বইয়ের সম্ভীমরক্ষা তুমিই করতে পারবে। ইতি ২৯ এপ্রিল ১৯৩৬ বিভিন্ন আলোচনায় বক্তৃতায় বা সাক্ষাৎকারে সংগীত বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের নানা চিন্তার প্রকাশ আছে ইংরেজি ভাষায়। ‘সংগীতচিন্তা' গ্রন্থে সংকলিত সেই আলোচনাগুলিও এখানে ক্রমান্বয়ে भूघिउ श्श्वन : S & ፬8¢