পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

" و ب. م. **. · ?ጳ á. সাহিত্য ". . . " SVS ভুবনমোহিনীপ্ৰতিভা, অবসরসরোজিনী, দুঃখসঙ্গিনী এই তিনখানি গীতিকাব্য আমরা সমালোচনার জন্য প্রাপ্ত হইয়াছি। ইহাদিগের মধ্যে ভুবনমোহিনীপ্ৰতিভা ও অবসরসরোজিনীর মধ্যে অনেকগুলি আৰ্যসংগীত আছে কেননা ইহাদিগের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক, অপরটি বালক ইহা প্ৰায় প্রত্যক্ষ যে দুর্বলদিগের যেমন শারীরিক বল অল্প তেমনি মানসিক তেজ অধিক; ঈশ্বর একটির অভাব অন্যটির দ্বারা পূর্ণ করেন। ভুবনমোহিনীপ্ৰতিভা ও অবসরসরোজিনী পড়িলে দেখিবে, ইহাদিগের মধ্যে একজনের প্রয়াস আছে, অধ্যবসায় আছে, শ্রমশীলতা আছে। একজন আপনার হৃদয়ের খনির মধ্যে যে রত্ন যে ধাতু পাইয়াছেন তাহাই পাঠকবর্গকে উপহার দিয়াছেন, সে রত্নে ধূলিকদম মিশ্ৰিত আছে কিনা, তাহা সুমার্জিত মসৃণ করিতে হইবে কিনা তাহাতে ভূক্ষেপ নাই। আর-একজন আপনার বিদ্যার ভাণ্ডারে যাহা-কিছু কুড়াইয়া পাইয়াছেন, তাহাই একটু মার্জিত করিয়া বা কোনো কোনো স্থলে তাহার সৌন্দর্য নষ্ট করিয়া পাঠককে আপনার বলিয়া দিতেছেন। একজন নিজের জন্য কবিতা লিখিয়াছেন, আর-একজন পাঠকদিগের জন্য কবিতা লিখিয়াছেন। ভুবনমোহিনী নিজের মন তৃপ্তির জন্য কবিতা লিখিয়াছেন, আর রাজকৃষ্ণবাবু যশপ্ৰাপ্তির জন্য কবিতা লিখিয়াছেন, নহিলে তিনি বিদেশীয় কবিতার ভাব সংগ্ৰহ করিয়া নিজের বলিয়া দিতেন না। ভুবনমোহিনী পৃথিবীর লোক, তার কবিতার নিন্দা করিলেও গ্রাহ্য করবেন। না, কেননা তিনি পৃথিবীর লোকের নিমিত্ত কবিতা লেখেন নাই। আর রাজকৃষ্ণবাবু তাহার কবিতার নিন্দা শুনিলে মর্মতিক ক্ষুব্ধ হইবেন, কেননা যশোচ্ছাই তীহাকে কবি করিয়া তুলিয়াছে। একজন অশিক্ষিত রমণীর প্রতিভায় ও একজন শিক্ষিত যুবকের প্রয়াসে এই প্ৰভেদ। কবিরা যেখানেই প্রায় পরের অনুকরণ করিতে যান। সেইখানেই নষ্ট করেন ও যেখানে নিজের ভাব লেখেন সেইখানেই ভালো হয়, কেননা তাহদের নিজের ভাবস্রোতের মধ্যে পরের ভাব ভালো । করিয়া মিশে না। আর কুকবিরা প্ৰায় যেখানে পরের অনুকরণ বা অনুবাদ করেন। সেইখানেই ভালো হয় ও নিজের ভাব জুড়িতে গেলেই নষ্ট করেন, কেননা হয়। পরের মনোভাব-স্রোতের মধ্যে তঁহাদের নিজের ভাব মিশে না কিংবা তাহার আশ্রয় উচ্চতর কবির কবিত্বের নিকট তাহার নিজের ভাব হংসমধ্যে বক যথা’ হইয়া পড়ে! এই নিমিত্ত অবসরসরোজিনীর মধুমক্ষিক-দংশন’ ও ‘প্রবাহি চলিয়া যাও অয়ি লো তটিনী’ ইত্যাদি কবিতাগুলি মন্দ নাও লাগিতে পারে! জ্ঞানাঙ্কুর ও প্রতিবিম্ব कॉर्डिंक S३४७ মেঘনাদবধ কাব্য বঙ্গীয় পাঠকসমাজে যে-কোনো গ্রন্থকার অধিক প্রিয় হইয়া পড়েন, তাহার গ্রন্থ নিরপেক্ষভাবে সমালোচনা করিতে কিঞ্চিৎ সাহসের প্রয়োজন হয়। তঁহার পুস্তক হইতে এক বিন্দু দোষ বাহির করিলেই, তাহা ন্যায্য হউক বা অন্যায্যই হউক, পাঠকেরা আমনি ফণা ধরিয়া উঠেন। ভীরু সমালোচকরা ইহাদের ভয়ে অনেক সময়ে আপনার মনের ভাব প্রকাশ করিতে সাহস করেন না। সাধারণ লোকদিগের প্রিয় মতের পোষকতা করিয়া লোকরঞ্জন করিতে আমাদের বড়ো একটা বাসনা নাই। আমাদের নিজের যাহা মত তাহা প্রকাশ্যভাবে বলিতে আমরা কিছুমাত্র সংকুচিত হইব না বা যদি কেহ আমাদের মতের দোষ দেখাইয়া দেন। তবে তাহা প্ৰকাশ্যভাবে স্বীকার করিতে আমরা কিছুমাত্র লজ্জিত হইব না। এখনকার পাঠকদের স্বভাব এই যে, তাহারা ঘটনাক্রমে এক-একজন লেখকের অত্যন্ত অনুরক্ত হইয়া পড়েন, এরূপ অবস্থায় তাহারা সে লেখকের রচনায় কোনো দোষ দেখিতে পান না, অথবা কেহ যদি তাহার কোনো দোষ দেখাইয়া দেয় সে দোষ বোধগম্য ও যুক্তিযুক্ত হইলেও তাহারা সেগুলিকে গুণ বলিয়া বুঝাইতে ও বুঝিতে ।