পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য । У 98 কঁপিল কনকলঙ্কা, বৃক্ষশাখা যথা । মেঘনাদবধ কাব্যে মহান ভাবোত্তেজক যে তিন-চারিটি মাত্র বর্ণনা আছে। তন্মধ্যে ইহাও একটি। রাবণের সভায় গিয়া এই সন্দেশবহ। ইন্দ্ৰজিতের নিধনবার্তা নিবেদন করিল, অমনি রাবণ মূৰ্ছিত হইয়া পড়িলেন; রুদ্ৰতেজে বীরভদ্রবলী রাবণের মূৰ্ছাভঙ্গ করিলেন। পরে বীরভদ্র যুদ্ধের বিবরণ বিস্তারিত রাপে বর্ণনা করিয়া কহিলেন, প্রফুল্ল হায় কিংশুক যেমনি ভূপতিত, বনমাঝে, প্রভঞ্জনবলে মন্দিরে দেখিানু শূরে। বায়ুবলছিন্ন কিংশুক ফুলটির মতো মৃত মহাবীর মেঘনাদ পড়িয়া আছেন, ইহা তো সমুচিত তুলনা হইল না। একটি মৃত বালিকার দেহ দেখিয়া তুমি ওইরূপ বলিতে পারিতে! নহিলে দূতের বাক্য মর্মস্পৃক হইয়াছে। পরে দূত উপরি-উক্ত কথাগুলি বলিয়া অদৃশ্য হইয়া গেল। এইবার রাবণ গর্জিয়া উঠিলেন এ কনক-পুরে, ধনুর্ধর আছে যত সাজো শীঘ্ৰ করি চতুরঙ্গে! রণরঙ্গে ভুলিব এ জ্বালা এ বিষম জ্বালা যদি পরিবে ভুলিতে! পাঠকেরা বলিবেন এইবার তো হইয়াছে; এইবার তো রাবণ প্ৰতিহিংসাকে শোকের ঔষধি করিয়াছেন। কিন্তু পাঠক হয়তো দেখেন নাই ‘তেজস্ব আজি মহারুদ্র তেজো” রাবণ স্বভাবত তো এত তেজস্বী নন, তিনি মহারুদ্রতেজ পাইয়াছেন, সেইজন্য আজ উন্মত্ত। কবি বীরবাহুর শোকে রাবণকে স্ত্রীলোকের ন্যায় কাদাইয়াছেন, সুতরাং ভাবিলেন যে রাবণের যেরূপ স্বভাব, তিনি তাহার প্ৰিয়তম পুত্র ইন্দ্ৰজিতের নিধনবার্তা শুনিলে বাঁচিবেন কীরূপে ? এই নিমিত্তই রুদ্রতেজাদির কল্পনা করেন। ইহাতেও রাবণ যে স্ত্রীলোক সেই স্ত্রীলোকই রহিলেন। এই নিমিত্ত ইহার পর রাবণ যে যে স্থলে তেজস্বিতা দেখাইয়াছেন তাহা তাহার স্বভাবগুণে নহে তাহা দেব-তেজের গুণে। মেঘনাদবধ কাব্যে কবি যে ইচ্ছাপূর্বক রাক্ষসপতি রাবণকে ক্ষুদ্রতম মনুষ্য করিয়া চিত্রিত করিয়াছেন, তাহা নয়। রাবণকে তিনি মহান চরিত্রের আদর্শ করিতে চাহিয়াছিলেন, কিন্তু তাহাকে কিন্তু ‘কোমল সে ফুলসম’ করিয়া গড়িয়াছেন। ইহা আমরা অনুমান করিয়া বলিতেছি না, ইলে আমাদের কােনাে সন্ধান্ত বন্ধুকে যে পত্র লিখেন তাহার নিম্নলিখিত অনুবাদটি পাঠ রয়া দেখুন। * "এখানকার লোকেরা অসন্তোষের সহিত বলিয়া থাকে যে, মেঘনাদবধ কাব্যে কবির মনের টান রাক্ষসদিগের প্রতি! বাস্তবিক তাহাই বটে। আমি রাম এবং তঁহার দলবলগুলাকে ঘূণা করি, রাবণের ভাব মনে করিলে আমার কল্পনা প্ৰজ্বলিত ও উন্নত হইয়া উঠে। রাবণ লোকটা খুব জমকালো ছিল।” মেঘনাদবধ কাব্যে রাবণের চরিত্র যেরূপ চিত্রিত হইয়াছে তাঁহাই যদি কবির কল্পনার চরম উন্নতি হইয়া থাকে। তবে তিনি কাব্যের প্রারম্ভভাগে মধুকরী কল্পনা দেবীর’ যে এত করিয়া আরাধনা করিয়াছিলেন তাহার ফল কী হইল ? এইখানে আমরা রাবণকে অবসর দিলাম। ভারতী SMKS y Sbr.8