পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য S8ዒ উঠি দেখো শশিমুখি, কেমনে ফুটিছে, চুরি করি। কান্তি তব মঞ্জুকুঞ্জবনে কুসুম! ইত্যাদি। : এই দৃশ্যে মেঘনাদের কোমলতা সুন্দর বর্ণিত হইয়াছে। প্রমীলার নিকট হইতে ইন্দ্ৰজিতের বিদায়টি সুন্দর হইয়াছে, তাহার মধ্যে বাকচাতুরী কিছুমাত্র নাই। কিন্তু আবার একটি যথা” । যথা যবে কুসুমেষু ইন্দ্রের আদেশে ভাঙিতে শিবের ধ্যান; হায় রে, তেমতি চলিলা কন্দৰ্পবৃগী ইন্দ্ৰজিৎ বলী, ছাড়িয়া রতি-প্ৰতিমা প্ৰমীলা সতীরে। কুলগ্নে করিলা যাত্রা মদন; কুলগ্নে করি যাত্রা গেলা চলি মেঘনাদ বলীবিলাপিলা যথা রতি প্ৰমীলা যুবতী। ইত্যাদি 4. বলপূর্বক ইন্দ্ৰজিৎকে মদন ও প্রমীলাকে রতি করিতেই হইবে। রীতির ন্যায় প্রমীলাকে ছাড়িয়া মদনের ন্যায় ইন্দ্ৰজিৎ চলিলেন, মদন কুলগ্নে যাত্ৰা করিয়াছিলেন, ইন্দ্ৰজিৎও তাঁহাই করিলেন। তখন মদন ও ইন্দ্ৰজিৎ একই মিলিয়া গেল, আর রতিও কঁাদিয়াছিলেন, রতিবৃপিণী প্রমীলাও কঁদিলেন, তবে তে রতি আর প্রমীলার কিছুমাত্র ভিন্নতা রহিল না। আবার আর-একটি কৃত্রিমতাময় রোদন আসিয়াছে, যখন ইন্দ্ৰজিৎ গজেন্দ্রগমনে যুদ্ধে যাইতেছেন তখন প্ৰমীলা তাহাকে দেখিতেছেন। আর কহিতেছেন জানি আমি কেন তুই গহন কাননে ভ্ৰমিস রে গজরাজ! দেখিয়া ও গতি— অভিমানী? সরু মাজা তোর রে কে বলে, কেশরি? তুইও তেঁই সদা বনবাসী। নাশিস বারণে তুই, এ বীর-কেশরী ভীম প্রহরণে রণে বিমুখে বাসারে, ইত্যাদি এই কি হৃদয়ের ভাষা? হৃদয়ের অশ্রুজল? হেমবাবু কহিয়াছেন বিদ্যাসুন্দর এবং অন্নদামঙ্গল ভারতচন্দ্র-রচিত সর্বোৎকৃষ্ট কাব্য, কিন্তু যাহাতে অন্তৰ্দাহ হয়, হৃৎকম্প হয়, তাদৃশ ভােব তাহাতে পড়িয়া আমরা ভারতচন্দ্ৰকে মাইকেলের নিমিত্ত সিংহাসনচ্যুত করিতে পারি না। তাহার পরে প্রমীলা যে ভগবতীর কাছে প্রার্থনা করিয়াছেন তাহা সুন্দর হইয়াছে। ইন্দ্ৰজিতের মৃত্যুবর্ণনা, লক্ষ্মণের চরিত্র-সমালোচনাস্থলে আলোচিত হইবে। মেঘনাদবধ কাব্যের মধ্যে এই ইন্দ্ৰজিতের চরিত্রই সর্বাপেক্ষা সুচিত্রিত হইয়াছে। তাহাতে একাধারে কোমলতা বীরত্ব উভয় মিশ্রিত হইয়াছে। চিনিতে পারি নাই, তৃতীয় সর্গে আমরা প্ৰমীলার সহিত বিশেষরূপে পরিচিত হই। প্রমীলা উতরিলা নিশাদেবী প্ৰমোদ উদ্যানে।