পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য S (S রক্ষোবধু মাগে রণ, দেহে রণ তারে, । বীরেন্দ্র। রমণী শত মোরা যাহে চাহ, যুঝিবে সে একাকিনী। ধনুর্বাণ ধরো, ইচ্ছা যদি, নরবর, নহে চর্ম আসি, কিংবা গদা, মল্লযুদ্ধে সদা মোরা রত। এখানে মল্লযুদ্ধের প্রস্তাবটা আমাদের ভালো লাগিল না। রাম যুদ্ধ করিতে অস্বীকার করিলে প্রমীলা লঙ্কায় গিয়া ইন্দ্ৰজিতের সহিত মিলিত হইলেন ও তৃতীয় সর্গ শেষ হইল। এখন আরএকটি কথা আসিতেছে, মহাকাব্যে যে-সকল উপাখ্যান লিখিত হইবে, মূল আখ্যানের ন্যায় তাহার প্রাধান্য দেওয়া উচিত নহে এবং উপাখ্যানগুলি মূল আখ্যানের সহিত অসংলগ্ন না হয়। একটি সমগ্ৰ সৰ্গ লইয়া প্ৰমীলার প্রমোদ উদ্যান হইতে নগর প্রবেশ করার বর্ণনা লিখিত হইয়াছে তাহার অর্থ কী? এই উপাখ্যানের সহিত মূল আখ্যানের কোনো সম্পর্ক নাই, অথচ একখানা শরতের মেঘের মতো যে অমনি ভাসিয়া গেল তাহার তাৎপৰ্য্য কী? এক সৰ্গ ব্যাপিয়া এমন আড়ম্বর করা হইয়াছে যে আমাদের মনে হইয়াছিল যে প্ৰমীলা না জানি কী একটা কারখানা বাধাইবেন, অনেক হাঙ্গাম হইল। কঁপিলা লঙ্কা আতঙ্কে, কঁাপিল মাতঙ্গে নিষাদী, রথে রখী, তুরঙ্গমে সাদীবর; সিংহাসনে রাজ; অবরোধে কুলবধু; বিহঙ্গম কঁপিল কুলায়ে পর্বত গহবরে সিংহ, বনহন্তী বনে; নৃমুণ্ডমালিনী সখী (উগ্ৰচণ্ডাধনী) আইলেন, বীর সকল দড়ে রড়ে জড় হইয়া গেল। কোদণ্ড টংকার, ঘোড়া দড়বাড়ি, অসির ঝনঝনি, ক্ষিতি টলমলি ইত্যাদি অনেক গোলযোগের পর হইল। কী? না প্ৰমীলা প্রমোদ উদ্যান হইতে নগরে প্রবেশ করিলেন, একটা সমগ্ৰ সৰ্গ ফুরাইয়া গেল, সে রাত্রে আবার ভয়ে রামের ঘুম হইল না। আচ্ছা, পাঠক বলুন দেখি আমাদের স্বভাবত মনে হয়। কিনা, যে, ইন্দ্ৰজিতের সহিত সাক্ষাৎ ব্যতীতও আরও কিছু প্ৰধান ঘটনা ঘটিবে। ইন্দ্ৰজিৎবধ নামক ঘটনার সহিত উপরি-উক্ত উপাখ্যানের কোনো সম্পর্ক নাই, অথচ মধ্য হইতে একটা বিষম গণ্ডগোল বাধিয়া গেল। আশ্বিন ১২৮৪ লক্ষ্মী ইন্দ্ৰকে আসিয়া সংবাদ দিলেন যে, ইন্দ্ৰজিৎ নিকুম্ভিলা যজ্ঞ আরম্ভ করিয়াছেন। কহিলেন স্বরীশ্বর, “এ ঘোর বিপদে বিশ্বনাথ বিনা, মাতঃ কে আর রাখিবে রাঘবে? দুর্বার রণে রাবণ-নন্দন। পন্নগ-অশনে নাগ নাহি ডরে যত, ততোধিক ডরি তারে আমি।” ইন্দ্ৰ ইন্দ্ৰজিতের নিকট শতবার পরাজিত হইতে পারেন, কিন্তু তথাপি পন্নগ-অশনে নাগ নাহি ডরে যত, ততোধিক ডারি তারে আমি। এ কথা তাহার মুখ হইতে বাহির হইতে পারে না। ইন্দ্ৰজিৎকে বাড়াইবার জন্য ইন্দ্ৰকে নত করা