পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ Գ Տ রবীন্দ্র-রচনাবলী কেন বা সেবিব তারে প্রসাদের তরে ? কেন তঁর কাছে হব দাসত্বে বিনত ? তার মতো আমিও বিধাতা হতে পারি। তবে শুন- শুন সবে বীর-সঙ্গীগণ তা হলে এ যুদ্ধে মোরা লভিব বিজয়! সুবিখ্যাত, সুদৃঢ়-প্রকৃতি বীরগণ । আমারেই রাজা ব’লে করেছে গ্রহণ। সুযুক্তি দিবার যোগ্য ইহারাই সবে, যুঝিব ঈশ্বর সাথে ইহাদের লয়ে! : ইহাদেরি রাজা হয়ে শাসিব এ দেশ, . তবে কী কারণে হব তাহারি অধীন? কখনো- কখনো তার হইব না দাস। আর-এক স্থলে— উচ্চ স্বৰ্গধামে মোরে করিলেন দান ঈশ্বর যে সুখ-ভূমি, সে স্থানের সাথে এ সংকীর্ণ আবাসের কী ঘোর প্রভেদ। যদি কিছুক্ষণ তীরে পাই গো ক্ষমতাএক শীত ঋতু তরে হই মুক্ত যদি তাহা হলে সঙ্গীগণ ল’য়ে- কিন্তু হায়— চারি দিকে রহিয়াছে লৌহের বাধন!! এই ঘোর নরকের দৃঢ়মুষ্টি মাঝে কী দারুণরাপে আমি হয়েছি আবদ্ধ! উধের্ব নিম্নে জুলিতেছে বিশাল অনলএমন জঘন্য দৃশ্য দেখি নি কখনো! বীরের নৈরাশ্য সুন্দরীরূপে বৰ্ণিত হইয়াছে। অবশেষে শয়তান স্থির করিলেন যদি ঈশ্বর-সৃষ্ট মনুষ্যের কোনো অপকার করিতে পারেন তাহা হইলে তিনি ‘এই শৃঙ্খলের মধ্যে থাকিয়াও সুখে ঘুমাইবেন”। ইতিমধ্যে ডেনিসরা একবার ইংলন্ড আক্রমণ করিয়াছিল; কিন্তু অ্যালফ্রেড তাহাদিগকে দমন করেন। নবম শতাব্দীতে অ্যালফ্রেডের রাজত্বকালে অ্যাংলো স্যাকসন ভাষা ও সাহিত্য চরম উন্নত সীমায় পৌঁছিয়াছিল। অ্যালফ্রেডের এই একমাত্র বাসনা ছিল যে, যাহাতে “মৃত্যুর পর তিনি তাহার সৎকার্যের স্মরণচিহ্ন রাখিয়া যাইতে পারেন”। সে বিষয়ে তিনি কৃতকার্য হইয়াছিলেন। তিনি একজন বলবান যোদ্ধা ছিলেন, ও তখনকার ইংলন্ডের অন্যান্য রাজ্য অতিশয় বিশৃঙ্খল হইয়াছিল, ইচ্ছা করিলে হয়তো তিনি সমস্ত ইংলন্ড বশে আনিতে পারিতেন। কিন্তু সেদিকে তাহার অভিলাষ ধাবিত হয় নাই, শাস্তিস্থাপনা, সুশাসন ও নিজ প্রজাদের মধ্যে সুশিক্ষা প্রচার করাই তঁহার একমাত্র ব্রত ছিল। অ্যালফেডের যে অসাধারণ প্রতিভা বা উদভাবনী শক্তি ছিল তাহা নহে, তাহার সৎ ইচ্ছা ও মহান অধ্যবসায় ছিল। তিনি তাহার উচ্চ আশা ও স্বাৰ্থ পরিতৃপ্ত করিতে কিছুমাত্র মন দেন নাই, প্রজাদের মঙ্গলই তাহার জীবনের উদ্দেশ্য ছিল। তিনি দুঃখ করিয়া বলেন যে, এমন একদিন ছিল যখন বিদেশ হইতে লোকে ইংলন্ডে বিদ্যা শিখিতে আসিত, কিন্তু এখন বিদ্যা শিখিতে গেলে বিদেশীদের নিকট শিখিতে হয়। এই অজ্ঞতা দূর করিবার জন্য