পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s१७ ॥ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী দাঁড়াইয়া ছিলাম, সেই দিকে নেত্র ফিরাইলেন, এবং তঁহার সেই অনির্বাচনীয় নম্রতার সহিত এমন । শ্ৰীপূৰ্ণ নমস্কার করিলেন যে, আমি সেই মুহুর্তেই সৌন্দর্যের সর্বাঙ্গ যেন দেখিতে পাইলাম।. এইবার প্রথম র্তাহার কথা শুনিতে পাইলাম, শুনিয়া এমন আহ্বাদ হইল যে, সূরামত্তের ন্যায় আমার সঙ্গীদের সঙ্গ পরিত্যাগ করিয়া ছুটিয়া আসিলাম। আমার নির্জন গৃহে আসিয়া সেই অতিশয় ভদ্রমহিলার বিষয় চিন্তা করিতে লাগিলাম। ভাবিতে ভাবিতে নিদ্ৰা আসিল ও এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখিলাম। সেই স্বপ্নের বিষয় সেই সময়কার প্রধান প্রধান কবিদের জানাইবা স্থির করিলাম। যাহারা যাহারা প্রেমের অধীন আছেন। তঁহাদের বন্দনা করিয়া ও তাঁহাদের এই স্বপ্নের প্রকৃত অর্থ-ব্যাখ্যা করিবার নিমিত্ত অনুরোধ করিয়া এই স্বপ্নের বিষয়ে একটি কবিতা লিখিব স্থির করিলাম। সেই কবিতাটি (Sonnet) এই— প্ৰেম-বন্দী হৃদি যাঁরা, সুকোমল মন, যাঁরা পড়িবেন এই সংগীত আমার, র্তারা মোর অনুনয় করুন শ্রবণ, বুঝায়ে দিউন মোরে অর্থ কী ইহার ? যে কালে উজ্জ্বল তারা উজলে আকাশ, নিশার চতুর্থ ভাগ হয়ে গেছে। শেষ, প্ৰেম মোর নেত্ৰে আসি হলেন প্ৰকাশ, স্মরিলে এখনো কাপে হৃদয় প্রদেশ! দেখে মনে হল যেন প্ৰফুল্ল আনন; ঘুমাইয়া রয়েছেন মহিলা আমারঅবশেষে জাগি উঠি, প্রেমের আদেশে সািভয়ে জলন্ত-হৃদি করিলা আহার! তার পরে চলি গেলা প্ৰেম অন্য দেশে কঁদিতে কঁাদিতে অতি বিষগ্ন-আকার! 卑 এই স্বপ্নের পর হইতে সেই অতি শ্ৰীমতী মহিলার চিস্তাতেই ব্যাপৃত ছিলাম। ক্রমে ক্রমে আমার স্বাস্থ্য এমন নষ্ট হইয়া আসিল যে, আমার আকার দেখিয়া বন্ধুরা অতিশয় চিন্তিত হইলেন; আবার যে গৃঢ় কথা সকল-কথা অপেক্ষা আমি লুকাইয়া রাখিবার চেষ্টা করিয়াছি, কেহ কেহ অসন্দভিপ্ৰায়ে তাহাই জানিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। আমি তাঁহাদের উদ্দেশ্য বুঝিতে পারিয়া যুক্তি ও প্রেমের পরামর্শে উত্তর দিলাম যে, প্রেমের দ্বারাই আমার এই অবস্থা হইয়াছে। আমার আকারে প্রেমের চিহ্ন এমন স্পষ্ট প্রকাশ পাইতেছিল যে, সে গোপন করা বৃথা। কিন্তু যখন তাহারা জিজ্ঞাসা করিল- “কাহার প্রেমে বিচলিত হইয়াছ ?? আমি তাহাদের দিকে চাহিলাম, হাসিলাম, আর উত্তর দিলাম না। পূর্বেই বলা হইয়াছে, বিয়াত্রিচে দান্তেকে অভিবাদন করিলে দান্তে কী আনন্দ অনুভব করিতেন! কিন্তু একবার দাস্তের নামে এক অতি মিথ্যা নিন্দা উঠে, সেই নিন্দা “সেই অতি কোমলা, পাপের বিনাশয়িতা, পুণ্যের রাজীৱী-স্বরূপার কানে গেল। দান্তে কহিতেছেন, ‘এবার যখন তিনি আমার সম্মুখ দিয়া গেলেন তখন আমার সুখের একমাত্র কারণ সেই সুন্দর নমস্কার হইতে বঞ্চিত করিলেন। যেখানে যখন তঁহাকে দেখিয়াছি তাহার সেই অমূল্য নমস্কারের আশায় । আমি পৃথিবীর শক্ৰতা ভুলিয়াছি, আমার হৃদয়ে এমন একটি উদারতা জন্মিত যে, পৃথিবীতে যে আমার যাহা-কিছু দোষ করিয়াছে সমুদায় মার্জনা করিতাম।” এ নমস্কার হইতে, তাহার সেই প্রেমের একমাত্র পুরস্কার হইতে যখন তিনি বঞ্চিত হইলেন, তখন তিনি অত্যন্ত যন্ত্রণা পাইলেন,