পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

' u সাহিত্য ՏԳ Տ প্রশান্ত মুখ দেখিতে পাইলেন। সেই অজ্ঞান অবস্থায় এমন কাতর স্বরে মৃত্যুকে আহ্বান করিলেন যে, শয্যাপার্শ্বস্থ শুশ্ৰষাকারিণী রমণী ভয়ে কঁদিতে লাগিলেন। অবশেষে জাগ্রত হইয়া ইহা স্বপ্ন জানিতে পারিয়া সুস্থির হইলেন। একদিন তিনি মনে করিলেন, এ পর্যন্ত তিনি তাহার মহিলার বিষয় যাহা-কিছু লিখিয়াছেন, । সমুদয় অপূর্ণ হইয়াছে। ক্ষুদ্র গীতির মধ্যে ভােব প্রকাশ করিয়া পরিতৃপ্ত না হইয়া তিনি একটি বৃহৎ কবিতা লিখিতে আরম্ভ করিলেন কত কাল আছি। আমি প্রেমের শাসনে, এমন গিয়াছে স’য়ে অধীনতা তার, প্রথমে যা দুখ ব’লে করেছিনু মনে এখন তা ধরিয়াছে সুখের আকার! যদিও গো বলহীন হয়েছে পরান, গেছে চলি তেজ যাহা ছিল এই চিতে, তবু হেন সুখ প্রেম করেন গো দান মৃত্যুমূল্য দিয়ে চাই সে সুখ কিনিতে! প্রেমের প্রসাদে মোর হেন শক্তি আছে, প্ৰত্যেক নিশ্বাস ধরি প্রার্থনা আকারঅনুগ্রহ-ভিক্ষা চায় মহিলার কাছে— অতি দীনভাবে অতি নম্রভাবে আর! র্তারে দেখিলেই আসে সে ভাব আমার। এই কয় ছত্র লিখিয়াই সহসা গান থামিয়া গেল— সহসা ইহার নিম্নে লাটিন ভাষায় এই কথাগুলি লিখিত হইল, যে নগরী লোকে পূর্ণ ছিল সে আজ কী নির্জন হইয়াছে! সমস্ত জাতির মধ্যে যে জাতি মহত্তম ছিল সে জাতি আজ কী বিধবার আকার ধারণ করিয়াছে’ বিয়াত্ৰিচের মৃত্যু হইয়াছে- এই সংবাদ শুনিয়াই সহসা যেন তাহার সংগীত থামিয়া গেল। এমন একটি মহান ঘটনা শুনিলেন যেন তাহা আর চলিত ভাষায় লিখা যায় না, গ্ৰাম্য ভাষায় লিখিলে তাহা যেন অতি লঘু হইয়া পড়ে। এই নিদারুণ দুঃখে তাহার আর কী সত্ত্বনা হইতে পারে? তিনি । বিয়াত্ৰিচের মৃত্যু ও জন্মতিথি মিলাইয়া তখনকার জ্যোতিষ গণনার অনুসারে স্থির করিলেন— বিয়াত্ৰিচের মৃত্যুর সহিত নিশ্চয়ই খৃস্টীয় ত্রিমূর্তির (Holy Trinity) কোনো-না-কোনো যোগ । আছে - এই কল্পনাতেই তাহার কত সুখ হইল! তিনি নগরের প্রধান প্রধান লোকদিগকে পত্ৰ লিখিলেন, তাহাতে বিয়াত্ৰিচের মৃত্যুতে নগরের কী দুৰ্দশা হইয়াছে তাহাই ব্যাখ্যা করিলেনর্তাহার বিশ্বাস হইল, যেন বিয়াত্ৰিচের মৃত্যুতে সমস্ত নগরী অভাব অনুভব করিতেছে, অথবা যদি না করে, তবে প্রকৃতপক্ষে তাহাদের যে অভাব হইয়াছে, এ বিষয়ে তাহাদের চেতনা জন্মাইয়া দেওয়া তাহার কর্তব্য কর্ম। ক্ৰমে ক্ৰমে দুঃখের অন্ধকার তাহার হৃদয়ে গাঢ়তর হইতে লাগিল- যখন অশ্রুজল শুকাইয়া গেল। তখন স্থির করিলেন অশ্রুময় অক্ষরে তাহার মনের ভাব প্রকাশ করবেন। এই ভাবিয়া, যাহারা তঁহার দুঃখ বুঝিতে পরিবে, তাহার দুঃখে যাহারা সহজে মমতা করিতে পরিবে, সেই রমণীদের সম্বোধন করিয়া বলিতে লাগিলেন জীর্ণ হয়ে পড়িয়াছে গেছে শুকাইয়ানিভাতে এ জ্বালা যদি থাকে গো উপায় ।